চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজার: ৯ উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

৩১ জুলাই, ২০২১ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে টানা চারদিন অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিচু অঞ্চলসহ ৯ উপজেলা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখনো জেলার ৪১ ইউনিয়নের ৪১৩ গ্রামের প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারী বর্ষণে পানি নেমে গেলেও প্লাবিত এলাকার রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, ঘরের আসবাবপত্র, আবাদি জমি, মাছের পুকুর ও বসতঘরে পানি ঢুকে এসব অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর গত চারদিনে মাটির ঘরসহ পাহাড় ধস ও পানিতে ভেসে রোহিঙ্গাসহ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় জেলার বেশকিছু এলাকায় ফসলি জমি, পান বরজ ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আবাদ হওয়া ৩ হাজার ৩২৮ হেক্টর আউশ ধানের মধ্যে ৪৯১ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। আমন বীজতলার ৩ হাজার ৪৮১ হেক্টর থেকে নিমজ্জিত হয়েছে ৮৬২ হেক্টর। আমন রোপা ১৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টরের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর। জেলার ২ হাজার ৫৫ হেক্টর শাক সবজির মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে ৩৯৫ হেক্টর।

এছাড়াও ৩ হাজার ৬৫ হেক্টর পানবরজের মধ্যে ঢলের পানি ও লবণাক্ত পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ২৪ হেক্টর’। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা, ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক, রামু মরিচ্যা আরাকান সড়ক, রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, ঈদগড়,চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নসহ মাতামুহুরী নদী ভাঙন, পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া উপকূলীয় অঞ্চল, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প, টেকনাফের সাবরাং, হ্নীলা, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার নিম্ন অঞ্চলের সবখানেই ক্ষতির চিহ্ন রয়ে গেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত চারদিনে মাটির ঘরসহ পাহাড় ধস ও পানিতে ভেসে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ মারা গেছেন ১২ জন। পানিতে ভেসে গিয়ে প্রাণ গেছে রোহিঙ্গা শিশুসহ ১০ জনের। এসব ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ ও পাঁচ লাখ টাকা নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৬৫ পরিবারের অন্তত ৬০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তাদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। এতে আট হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এছাড়া পুলিশসহ অন্যরা সহযোগিতা করছেন’।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজনকে আশ্রয়ণকেন্দ্রে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে এসেছি। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাতের অন্ধকারে নিজে গিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়ণকেন্দ্রে আশ্রয়রত মানুষদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি। ইতোমধ্যে বইল্যাপাড়া, গোলদিঘির বিবেকানন্দ স্কুল, সাহিত্যিকা পল্লী, লাইট হাউসপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার দেড় হাজার মানুষকে প্রতি বেলা খাবার চলমান রয়েছে।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জেলার প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যে এলাকায় দুর্ঘটনা হোক না কেনো, সঙ্গে সঙ্গে খবর নিয়ে আহতদের চিকিৎসা সেবাদানের জন্য মেডিকেল টিমগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে’।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা পাননি এমন কেউ নেই। চাহিদা মতো সবাই চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন’। এদিকে অসহায় বন্যা দুর্গতদের মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা, বিভিন্ন যুব-ছাত্র সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থা ত্রাণ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট