চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

নতুন ঠিকাদার ও বর্ধিত ব্যয়ে শুরু হচ্ছে পিসি রোডের কাজ

ইফতেখারুল ইসলাম 

৩১ জুলাই, ২০২১ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফলাইন খ্যাত পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের কাজ অবশেষে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে। নিমতলা হতে বড়পুল এবং বড়পুল হতে তাসপিয়া পর্যন্ত অংশ ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দিয়েছে চসিক। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করতে পারছে না ঠিকাদার।

এদিকে, নতুন রেটে কাজ দেয়ার কারণে অনিষ্পন্ন কাজের ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তবে সিটি মেয়র বলেছেন, ব্যর্থ ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হবে। মেয়র পূর্বকোণকে বলেন, পোর্ট কানেকটিং রোডের বেহাল দশার বিষয়টি তিনি নিজেও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।

তাই ঠিকাদার কাজ শুরু না করা পর্যন্ত বড় বড় গর্তগুলো ভরাট করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চসিকের পক্ষ থেকে প্রকল্পের দেখভালকারী কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. তৈয়ব জানান, নিমতলা হতে বড়পুল এবং বড়পুল হতে তাসপিয়া পর্যন্ত কাজের দরপত্রের মূল্যায়ন হয়ে গেছে। প্রথম লটের কাজ পেয়েছে তাহের ব্রাদার্স এবং দ্বিতীয় লটের কাজ পেয়েছে কাশেম কনস্ট্রাকশন ও হোসাইন এন্ড ব্রাদার্স (জেভি)। এই দুই লটের কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দুই লটের প্রধানত কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি আছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেই তারা কাজ শুরু করবে। নিমতলা হতে বড়পুল পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি টাকার কাজ বাকি ছিল। এই অংশে বলতে গেলে উপরের লেয়ার কার্পেটিং বাকি আছে। তবে নতুন করে দরপত্র দিয়ে কাজ দেয়া হচ্ছে নতুন দরে।

তাই কাজের ব্যয় বেড়ে ২১ কোটি টাকা হয়েছে। এই লটে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। বড়পুল হতে তাসপিয়া একপাশে কার্পেটিং হয়েছে। অপর অংশের বেসিক কাজ হয়ে গেছে। এই লটে প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ বাকি ছিল। নতুন রেইটে তা ২৭ কোটি টাকা হয়েছে। এই লটে ব্যয় বেড়েছে ৭ কোটি টাকা। তৃতীয় লটের কাজ তাসপিয়া হতে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত কাজটি তাহের ব্রাদার্স পেয়েছে। এই অংশে বেশি কাজ বাকি রয়ে গেছে। ঠিকাদার ১০ কোটি টাকা বিল নিয়ে গেছে। প্রায় ২৯ কোটি টাকার কাজ বাকি ছিল। নতুন রেইটে কাজের ব্যয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪২ কোটি টাকা। এই অংশে ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। ব্যয় ৩০ কোটি টাকার উপরে গেলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। অনুমোদনের জন্য ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এবার ঠিকাদার ভাল পড়েছে উল্লেখ করে বলেন, যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, যে তিন লটে কাজ বাকি রয়ে গেছে তার পুনঃদরপত্র আহবানের আগে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি জাইকা প্রতিনিধি কাজ পরিমাপ করে কাজ কতটুকু হয়েছে এবং কতটুকু বাকি রয়েছে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজের পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়নি উল্লেখ করে বলেন, নতুন রেইটে কাজ দেয়ার কারণে ব্যয় বেড়েছে।

প্রকৌশলী তৈয়ব জানান, রানা বিল্ডার্স এখনো প্রায় ৮ কোটি টাকা বিল পাবে। কাজ করতে ব্যর্থ হলে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ জরিমানা করার কথা চুক্তিতেই উল্লেখ থাকে। সুতরাং তারা জরিমানা থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। বকেয়া বিল এবং ব্যাংক গ্যারান্টি কিংবা এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অথবা অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও সেখান থেকেও জরিমানা কেটে নেয়ার সুযোগ আছে। এমনকি কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ওই ঠিকাদারের বকেয়া বিল না থাকলেও মামলা করে জরিমানা আদায়ের বিধান রয়েছে। তবে পোর্ট কানেকটিং রোডের ব্যর্থ তিন ঠিকাদারের কাছে বকেয়া বিল এবং ব্যাংক গ্যারান্টি আছে।

তিনি জানান, রোদ পড়লেই কাজ শুরু হবে। প্রথম দুই লটের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং তৃতীয় লটের কাজের মেয়াদ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সুফল মিলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, বন্দর নিমতলা হতে অলংকার মোড় পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পোর্ট কানেকটিং সড়কটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ওই বছরের ২০ নভেম্বর কাজের উদ্বোধন করেন। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথক চারটি লটে কাজ পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হল, তাহের ব্রাদার্স, মঞ্জুরুল আলম কনস্ট্রাকশন (ম্যাক), রানা বিল্ডার্স ও রানা বিল্ডার্স লিমিটেড-সালেহ আহমেদ (জেভি)। এর মধ্যে তাহের ব্রাদার্স ছাড়া বাকি তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্পের আওতায় সড়কটির সংস্কার কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বহনকারী ১০-১২ হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান-লরি প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি ট্যাক্সিসহ আরও কয়েক হাজার গাড়ি ব্যবহার করে সড়কটি। সড়কের কিছু কিছু অংশে কাজ শেষ হলেও অনেক অংশই খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তে ভরে গেছে। তাই আধ ঘণ্টার রাস্তা পার হতে এখন সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ভোগান্তি এড়াতে পণ্যবাহী গাড়ির বেশিরভাগই বিকল্প সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে। যার কারণে ওই সব সড়কে প্রায়ই লেগে থাকছে যানজট। লোকজনের যাতায়াত তেমন না থাকায় সড়কের দুই পাশের ব্যবসায়ীরা সাড়ে ৩ বছর ধরেই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। বেচাকেনা নেই।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট