চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে নেই পর্যাপ্ত জনবল-জলযান

নাজিম মুহাম্মদ 

২৯ জুলাই, ২০২১ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

জনবল সংকট আর জলযান সংকটে ছোট বড় ১৫টি নদী পথের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম অবস্থা চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের। চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীপথে জাহাজ থেকে তেলসহ নানা পণ্য চুরির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমনকি নদীতে মাঝে- মধ্য পাওয়া যাচ্ছে বেওয়ারিশ লাশ। গত বছর চারটি ও চলতি বছরের প্রথম সাতমাসে ছয়টি বেওয়ারিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। এ অবস্থায় জনবল বাড়ানো ও প্রতিটি থানা এবং ফাঁড়িতে একটি করে দ্রুতগতির জলযান (স্পিডবোড) বরাদ্দ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছে চট্টগ্রাম নৌ পুলিশ। খবর নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের জলযান রয়েছে দুটি। একটি সদরঘাট নৌ থানা ও অন্যটি রাঙামাটিতে। নোয়াখালীতে আরও দুটি নৌযান থাকলেও সেগুলো অচল। নদীতে ভাড়া করা নৌযান নিয়ে কোনোভাবে অভিযান চালানো গেলেও বেগ পেতে হয় সাগরের অভিযানে। নৌ পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, নিঝুমদ্বীপ এলাকা সাগর পরিবেষ্টিত হওয়ায় সেখানে অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকটা আক্ষেপের সুরে নৌ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পাশ্ববর্তী দেশের নৌ পুলিশ এমনকি বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের অনেক দ্রুত গতির জলযান থাকলেও নৌ পুলিশের কাছে থাকা দুটি জলযানের ঘণ্টায় গতিবেগ সর্বোচ্চ মাত্র ৩০ কিলোমিটার। এসব জলযান নিয়ে সমুদ্রের মোহনায় যাওয়া সম্ভব নয়। জলযান সংকটের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নদীর পাড় দিয়ে পায়ে হেঁটে টহল দিতে হয় নৌ পুলিশের সদস্যদের। নৌ পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোমিনূল হক ভূঁইয়া জানান, ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা নিয়ে গঠিত এই নৌ পুলিশের অধীনে আটটি পুলিশ ফাঁড়ি ও একটি নৌ থানা রয়েছে। এর বাইরে হালদা নদীকে ঘিরে একটি নৌ থানাসহ সাতটি ফাঁড়ি নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এসব নদীপথে দস্যুতা কিংবা ছিনতাইযের ঘটনা তেমন একটা ঘটে না। তবে গভীর সমুদ্রে থাকা জাহাজ ও লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য চুরির ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন থানা ও ফাঁড়িগুলোতে গত বছরে মামলা হয়েছে ৩৪ টি। এরমধ্যে মৎস্য সুরক্ষা আইনে ১৩টি, বালু উত্তোলনের অপরাধে ছয়টি, পণ্য চুরি সংক্রান্ত ছয়টি, মারামারি সংক্রান্ত পাঁচটি ও অপমৃত্যু মামলা রয়েছে চারটি। চলতি বছরের সাতমাসে মামলা হয়েছে ১৯টি। এরমধ্যে ছয়টিই অপমৃত্যুর মামলা। বাকিগুলো পণ্য চুরি ও মৎস্য সুরক্ষা আইনের।
অভ্যন্তরীণ নৌ পথে চলাচলকারী নৌ যানের নিরাপত্তা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, নদী দূষণ রোধে নৌ পুলিশ সাধারণত কাজ করে থাকে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম নৌ পুলিশ সুপার মোমিনূল হক ভূঁইয়া জানান, সদরঘাট নৌ থানায় ২০ জন ও ফাঁড়ি গুলোতে ১০ জন করে নৌ পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে অনেকে অসুস্থ কিংবা ছুটিতে থাকেন। আমরা চেষ্টা করছি সীমিত জনবল নিয়ে কাজ করতে। আশা করছি এ সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠবো।
পুলিশ সুপার আরও জানান, নদীতে মাঝেমধ্যে বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায়। কর্ণফুলী, হাতিয়া ও নিঝুমদ্বীপ এলাকায় গত বছর চারটি ও চলতি বছরের সাতমাসে ছয়টি লাশ পাওয়া গেছে। এসব লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো, দাফনের ব্যবস্থা করা অনেকটা কঠিন হয়ে যায় আমাদের পক্ষে। নদীপথে এমনও এলাকা আছে যেখানে তীরে লাশ নিয়ে যাওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যা করার পর মৃতদেহ পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদ্ধার করা মৃতদেহের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। পিবিআই ও সিআইডির সহযোগিতায় এসব লাশের ফিঙ্গার প্রিন্টসহ প্রয়োজনীয় আলামত আমরা সংরক্ষণ করছি। যেমন- গত ডিসেম্বরে কর্ণফুলী নদীতে একটি মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায়। এখনো ওই মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
খবর নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের আওতাধীন পাঁচ জেলায় ছোট বড় ১৫টি নদীসহ উপকূলীয় এলাকা রয়েছে। দুটি জলযান নিয়ে নদীপথে অভিযান পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কোনো অভিযান পরিচালনা করতে গেলে অনেক সময় ভাড়া করা নৌযান দিয়ে কাজ চালাতে হয়।
নৌ পুলিশ সুপার মোমিনুল হক জানান, চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের অধীনে রয়েছে একমাত্র সদরঘাট নৌ থানা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলার অধীনে রয়েছে বার আউলিয়া ও কুমিলা নৌ ফাঁড়ি। কক্সবাজার জেলার অধীনে রয়েছে মাতারবাড়ি, টেকনাফ বদরখালী নৌ ফাঁড়ি। নোয়াখালীর অধীনে নলচিড়া ও নিঝুমদ্বীপ ফাঁড়ি। আর রাঙামাটির অধীনে সদর নৌ ফাঁড়ি রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের অধীনে তৈলারদ্বীপ, খাটখালী। নোয়াখালী জেলার অধীনে চেয়ারম্যান ঘাট, সোনাদিয়া। কক্সবাজারের অধীনে কুতুবদিয়া, রাঙামাটির অধীনে শুভলং নৌ ফাঁড়ি এবং বান্দরবান সদর নৌ ফাঁড়ি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের অধীন জেলাগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, হালদা, মেঘনা, ইছামতি,সাঙ্গু, ফেনী নদীসহ ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫টি নদী ও হ্রদ রয়েছে। এসব নদীতে নিয়মিত অভিযানে যেতে হয় নৌ পুলিশ সদস্যদের।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট