চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

স্লো ডেলিভারি : অফডক ও বন্দরে বাড়ছে কনটেইনারের চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুলাই, ২০২১ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

স্বাভাবিক সময়ের ন্যায় পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ার কারণে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনারে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে বন্দর ও অফডকের সব খালি জায়গা। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বন্দরের সক্ষমতার ৮৫ শতাংশ ও অফডকে ৭৫ শতাংশ কনটেইনারে পূর্ণ ছিল। তবে বছরের অন্যান্য দিনের ন্যায় কনটেইনার ডেলিভারি না হওয়া আমদানি পণ্যের চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে ধীরে ধীরে সক্ষমতার শতভাগ কনটেইনারে পরিপূর্ণ হতে যাচ্ছে বন্দর ও বেসরকারি অফডকগুলো।
সাম্প্রতিক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরের কনটেইনারের চাপ কমাতে সব ধরণের পণ্য বেসরকারি অফডকগুলো থেকে ডেলিভারির অনুমতি দেয়। সাময়িক সেই আদেশে বন্দরের কনটেইনার যাচ্ছে অফডকে। সেখানে সাময়িক সংরক্ষণ, আনস্টাফিং ও ডেলিভারি করা হচ্ছে। তবে ডেলিভারির পরিমাণ কম হওয়ায় ও রপ্তানি কনটেইনার ধীর গতিতে জাহাজীকরণ করার কারণে অফডকগুলোতেও কনটেইনারের চাপ বাড়ছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৯টি অফডকের ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউস কনটেইনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে খালি কনটেইনার ছিল ৩০ হাজার ১৭৩ টিইইউস। এছাড়া রপ্তানি কনটেইনার ছিল ১২ হাজার ৬৯৯ টিইইউস ও আমাদিন পণ্যের কনটেইনার ছিল ১৩ হাজার ১১৬ টিইইউস। সর্বমোট কনটেইনার ছিল ৫৫ হাজার ৯৮৮ টিইইউস। অন্যদিকে ৪৯ হাজার টিইইউস ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার টিইইউস কনটেইনার ছিল।
বেসরকারি অফডকগুলোতে কনটেইনার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিকডা সচিব রুহুল আমিন সিকদার পূর্বকোণকে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্তের ফলে সব ধরণের কনটেইনার ডেলিভারি অফডকগুলো থেকে হচ্ছে। এ কারণে সব অফডকগুলোতে প্রতিনিয়ত বন্দর থেকে কনটেইনার আসছে। এতে বন্দরের জায়গা খালি হওয়ায় অপারেশনাল কার্যক্রম এখনো চালু আছে।
তবে অফডকে যে পরিমাণে আমদানি পণের কনটেইনার আসছে সে অনুযায়ী ডেলিভারি হচ্ছে না। অন্যদিকে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারও চাহিদা অনুযায়ী জাহাজীকরণ হচ্ছে না। ফলে অফডগুলোও কনটেইনারে পরিপূর্ণ হওয়ার পথে। আর অফডক কনটেইনারে পূর্ণ হয়ে গেলে বন্দরের অভ্যন্তরেও আর কনটেইনার রাখার জায়গা থাকবে না। এতে ব্যহত হবে পারে পুরো আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ডেলিভারির পরিমাণ বাড়ানো ও দ্রুত জাহাজীকরণ করে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার কমানোর কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন রুহুল আমিন সিকদার।
এদিকে স্লো বা ধীরগতির ডেলিভারি প্রসঙ্গে সিএন্ডএফ এজেন্টস প্রতিনিধিরা জানান, লকডাউনের কারণে যানবাহন না থাকায় সিএন্ডএফ এজেন্টদের অফডকগুলোতে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকিং সময় স্বল্পতায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গিয়ে শুল্ক জমা দিয়ে শিপিং এজেন্টস ও ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্সদের কাছ থেকে ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে তারপর অফডকগুলোতে যেতে হচ্ছে। আর অধিকাংশ অফডক শহর থেকে দুরে হওয়ায় লকডাউনে যাতায়াত করতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে ও ডেলিভারিও কম হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলমান কঠোর লকডাউন ও ঈদের ছুটির ফাঁকে পড়ে সৃষ্ট কনটেইনারের চাপ সামলাতে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা সব ধরণের পণ্যের কনটেইনার বেসরকারি অফডকে সাময়িক সংরক্ষণ, আনস্টাফিং ও খালাসের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের প্রেক্ষিতে গত রবিবার এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মোহাম্মদ মেহরাজ-উল-আলম সম্রাট স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই অনুমতি দেন। যা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ থাকছে।
এর বাইরে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত সিংঙ্গাপুর ও কলম্বো পোর্টেও কনটেইনারের চাপ বেড়েছে। মাদার ভেসেল না পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য চাহিদা মাফিক পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে রপ্তানি পণ্যেরও চাপ রয়েছে অফডকে। এসব পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে পুরো পরিস্থিতি নির্ভর করে আমদানি পণ্য ডেলিভারি বাড়ার উপর।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট