চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বর্ষা এলেই ঝুঁকিমুক্তে তোড়জোড়

ইফতেখারুল ইসলাম

২৮ জুলাই, ২০২১ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বর্ষণ শুরু হলেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারারীদের ঝুঁকিমুক্ত করার তোড়জোড় শুরু হয়। বর্ষা চলে গেলে সবাই আবার নীরব হয়ে পড়ে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ এবং স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ এক প্রকার প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানুষের বসবাস বাড়ছে। দুই বছর আগেও যেখানে মানুষের আনাগোনা ছিল না, সেখানেও বসতি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। একারণে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের ঝুঁকিমুক্ত করার কাজে নেমেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা বলছেন, প্রশাসনের উদাসীনতা, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের লেজুড়বৃত্তি, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করাসহ নানা কারণে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী বাড়ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৮টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীর মধ্যে রেলওয়ের লেকসিটি আবাসিক এলাকা-সংলগ্ন পাহাড়ে ২২ পরিবার, পূর্ব ফিরোজ শাহ ১ নম্বর ঝিল সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮ পরিবার, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে ২৮ পরিবার, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১০ পরিবার, রেলওয়ে, সওজ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ওয়াসার মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলে ১৬২ পরিবার, ব্যক্তিমালিকানাধীন এ কে খান পাহাড়ে ২৬ পরিবার, হারুন খানের পাহাড়ে ৩৩ পরিবার, পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩ পরিবার, মধুশাহ পাহাড়ে ৩৪ পরিবার, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩ পরিবার, মিয়ার পাহাড়ে ৩২ পরিবার, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮ পরিবার, আমিন কলোনি সংলগ্ন টাংকির পাহাড়ে ১৬ পরিবার, লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদরাসা সংলগ্ন পাহাড়ে ১১ পরিবার, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১ পরিবার, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৯ পরিবার এবং এম আর সিদ্দিকী পাহাড়ে ৮ পরিবার বসবাস করছে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে সীতাকু-ের জঙ্গল ছলিমপুরে পাহাড়ে বসবাস করছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ছলিমপুরের বসবাসকারীদের সরকারি হিসেবেই রাখা হয় না। এছাড়া বায়েজিদ লিংক রোডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বসতি। এদের অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী। পাহাড় কাটার সাথে জড়িতরা কখনোই চায় না ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা পাহাড় থেকে সরে যাক। কারণ নিন্মআয়ের এসব মানুষ পাহাড় থেকে নেমে গেলে দখল এবং কাটার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে মৃত্যু ঘটে ৩০ জনের। ২০০৭ সালের ঘটনার পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি অনেকগুলো সুপারিশ করেছিল। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে এই কমিটি কাজ করার কথা থাকলেও গত দেড় দশকে উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি কমিটি। উল্টো ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নতুন কোন তালিকা নেই। আগের তালিকানুযায়ী সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন ৮টি পাহাড়ে প্রায় ৩৫০টি অতিঝুঁকিপূর্ণ পরিবার রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা জানানোর জন্য তাদেরকে বলা হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে তারা এখনো সংখ্যাটি নির্ণয় করতে পারেনি। তবে সরকারি-বেসরকারি সব পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের ঝুঁকিমুক্ত করতে জেলা জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা যাতে সরে যান তাদেরকে সতর্ক করতে ১৭টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাইকিং করছে। এছাড়া ৫ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঠে আছেন। যেসব পরিবার অতিঝুঁকিতে বসবাস করছে তাদেরকে বাসা থেকে বের হতে বাধ্য করা হচ্ছে। কারণ জীবন আগে। দুইদিন আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে’।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী পূর্বকোণকে বলেন, কেউ যাতে পাহাড় কাটতে না পারে সেদিকে তারা সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। কোথাও পাহাড় কাটার খবর পেলে দ্রুত অভিযান চালানোর জন্য একটি গাড়ি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। এছাড়া কাটার প্রমাণ পেলে মামলা দেয়া হচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ডাকা হলে তারা অংশগ্রহণ করেন।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট