চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চমেক হাসপাতাল : ২০ মিনিটেই ১২ এম্বুলেন্স

ইমাম হোসাইন রাজু

২৭ জুলাই, ২০২১ | ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট। স্থান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটক। হঠাৎ করেই পূর্ব পাশের সড়ক দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালো একটি এম্বুলেন্স। গাড়ির ভেতরেই মুমূর্ষু এক বৃদ্ধ। নাকে-মুখে লাগানো অক্সিজেন লাইন। সাথে থাকা স্বজন টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানালেন বৃদ্ধটি তার বাবা। করোনায় আক্রান্ত তিনি।  শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। দৃশ্যটি গতকাল সোমবারের।
এ রকম দৃশ্য শুধু একটিই নয়। দুপুর ১২ টা ৫৫ মিনিট থেকে ১টা ১৫ মিনিট চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায় সাইরেন বাজিয়ে একটু পর পরই রোগী নিয়ে আসছে এম্বুলেন্স। ২০ মিনিটেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থামে এমন ১২টি এম্বুলেন্স। এরমধ্যে এক সঙ্গেই রোগী নিয়ে তিন/চারটি এম্বুলেন্স জরুরি বিভাগের সামনে থামতেও দেখা গেছে। সবগুলো এম্বুলেন্সের ভেতরেই মুমূর্ষু রোগী। প্রত্যেকের মুখেই অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।
এম্বুলেন্স চালক ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ টি এম্বুলেন্সের মধ্যে আটটিই এসেছে বিভিন্ন উপজেলা থেকে। বাকি চারটির মধ্যে দু’টি নগরীর অন্য হাসপাতাল থেকে আইসিইউ’র আশায় আসে এখানে। অপর দু’টি আনা হয়েছে নগরীর দুই এলাকা থেকে। সব রোগীই শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছে হাসপাতালে। যার মধ্যে করোনা পজিটিভ এবং করোনার উপসর্গের রোগীও ছিল।
বাঁশখালী থেকে আসা এক রোগীর স্বজন মো. হামিদুল আলম জানান, তার বাবা গত এক সপ্তাহ আগে জ¦রে আক্রান্ত হয়। সাথে শুকনো কাশিও ছিল। তিন দিন আগে নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ আসে। বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিলেও সোমবার সকাল থেকেই হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর।
হামিদুল আলম বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গেই বাবাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা বাবার পরিস্থিতি দেখে আর ভর্তি নেননি। বলেছেন দ্রুত এ হাসপাতালে (চমেক হাসপাতাল) নিয়ে আসতে। তাই নিয়ে এসেছি। ’
জরুরি বিভাগের কর্মরত চিকিৎসকরা জানান, গেল কয়েকদিনেই সবচেয়ে বেশি রোগী আসছেন হাসপাতালটিতে। যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা। চট্টগ্রাম ছাড়াও অনেক সময় অন্য জেলা থেকেও রোগীরা আসছেন। এদের বেশিরভাগ রোগীই শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ও কোভিড-১৯ কোর কমিটির সদস্য সচিব ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি দিনদিনই নাজুক হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। এক প্রকার হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তবুও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ অসচেতনতাকে দায়ী করে এ চিকিৎসক আরও বলেন, বেশিরভাগ রোগীই গ্রামাঞ্চল থেকে আসছেন। মূলত তাদের মধ্যে অবহেলা আর অসচেতনতা ছিল বেশি। এছাড়া ভর্তিরতদের সিহংভাগই এখন পর্যন্ত ভ্যাক্সিন গ্রহণ করেননি। এই মুহূর্তে মাস্ক পরা আর দ্রুত ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে হবে। না হয় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে দাঁড়াবে।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের এম্বুলেন্স ভিড়ের এ চিত্রই নয়। একই অবস্থা দেখা যায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের সামনেও। গতকাল সোমবার বিকেলে হাসপাতালটির চত্বরে গিয়ে এম্বুলেন্স আর সিএনজি যোগে রোগী আসার দৃশ্যও চোখে পড়ে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে। রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রীতিমতো হিমশিম অবস্থা তাদেরও। চমেকের মতো এ হাসপাতালেও মুমূর্ষু রোগীরাই বেশি ভর্তি হচ্ছেন। যাদের সকলেরই প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের।
হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও কোভিড-১৯ ফোকাল পার্সন ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ঈদের আগে ও পরেই সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে আসছে। যাদের স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ১৫শ’ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হতো, বর্তমানে সেখানে সাড়ে ৩ থেকে চার হাজার পর্যন্ত লাগছে। রোগী যেমন বাড়ছে, সঙ্গে অক্সিজেনের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট