চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চামড়ায় ধস, প্রভাব এতিমখানায়

ইমরান বিন ছবুর 

২৬ জুলাই, ২০২১ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

নগরীর হয়রত আমানত শাহ দরগাহ এলাকার তানজিমুল মুসলিম এতিমখানা। ১৯৭০ সালে মাত্র ১০ শিক্ষার্থী নিয়ে এ এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। এতদিন তানজিমুল মুসলিম এতিমখানার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসতো কোরবানির চামড়া থেকে। তবে গত তিন বছর ধরে এ আয়ের পরিমাণ কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় আয়ে টান পড়ে। এতে এতিমখানাটি চালাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

শুধুমাত্র তানজিমুল মুসলিম এতিমখানা নয়, নগরীসহ চট্টগ্রামের ৪ শতাধিক নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এতিমখানার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসতো কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে। প্রতিবছর কোরবানির সময় অনেকেই সম্পূর্ণ চামড়া বা চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মাদ্রাসা বা এতিমখানায় দান করেন। তবে গত তিন বছর ধরে এ আয় অর্ধেকের চেয়েও কমে এসেছে। চামড়ার এ আয় জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে। সামর্থ না থাকায় অনেকেই খাবারের মান ও আনুষাঙ্গিক খরচ কমিয়ে অনেকটা কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে মাদ্রাসা-এতিমখানার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।

নগরী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদ্রাসা পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে এই চিত্রই পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের আওতাধীন নগরী ও জেলায় ২৫০ টির বেশি এতিমখানা রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের মত। অন্যদিকে, আন্ধসঢ়;জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অধীনে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে এতিমখানাসহ প্রায় ১৫০টির মত মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। 

নগরীর হয়রত আমানত শাহ দরগাহ এলাকার তানজিমুল মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ মো. আমান উল্লাহ বলেন, এখন তো চামড়ার দাম অনেক কম। তিন থেকে চার বছর আগে যেসব চামড়া দুই-তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন সে সাইজের চামড়া দুই-তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবছর চামড়া থেকে মোট ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে। অনেকে আবার চামড়া বিক্রির টাকা কোরবানির কিছুদিন পর দিয়ে যায়।  তিনি আরো বলেন, তিন-চার বছর আগে চামড়ার পরিমাণ কম আসলেও দাম বেশি ছিল। ফলে আয়ও বেশি হতো। সে সময়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে। চামড়া থেকে প্রাপ্ত আয় এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক মাদ্রাসায় আরো কমেছে।

বিভিন্ন বেসরকারি এতিমখানা শুধুমাত্র কোরবানির চামড়ার টাকা দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত চলে। কিন্তু এখন এক মাসও যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের আওতাধীন নগরী ও জেলায় ২৫০ টির বেশি এতিমখানা রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের মত বলে জানান বলে জানান তানজিমুল মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের মহাসচিব হাফেজ মো. আমান উল্লাহ।

গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ও সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ পেয়ার মোহাম্মদ বলেন, আন্ধজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র অধীনে এতিমখানাসহ প্রায় ১৫০টির মত মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। কোরবানির চামড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ এসব মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ব্যয় হয়। বিগত বছরগুলোর তুলনায় চামড়ার দাম অনেক কমে গেছে। তবে আমরা আগের চেয়ে বেশি চামড়া পাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, এবছর কোরবানিতে মহানগরীতেই প্রায় ২৫ হাজারের মত চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বাইরে উত্তর জেলায় ১০ হাজার এবং দক্ষিণ জেলায় ১৫ হাজারের মত চামড়া সংগ্রহ করেছি।

আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চুন্নাপাড়া মুনিরুল ইসলাম সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মহিউদ্দিন হাশেমী বলেন, চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোর কোরবানি চামড়া থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হতো। এখন সে আয়ের পরিমাণ প্রতি বছর বছর কমছে। সাত আট বছর আগেও যেখানে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে, সে আয় এখন মাত্র পাঁচ ছয় হাজারে নেমে এসেছে। ফলে এতিমখানা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট