চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

লোকসানে ব্যাপারিরা, খামারিরা খুশি

ইফতেখারুল ইসলাম

২৬ জুলাই, ২০২১ | ১২:১৪ অপরাহ্ণ

এবারের কোরবানির ঈদে চার কারণে কোরবানির পশুর দাম কমেছে। তবে যারা প্রকৃত খামারি তারা কম দামে গরু ছাড়েননি। বরং খামারে রেখে দিয়েছেন। তবে লোকসান এবং দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন মৌসুমি বেপারিরা। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবার কোরবানিতে দাম কমার কারণসমূহ হল, কিছু খামারি আছেন যারা দ্রুত লাভের আশায় গরুকে স্টেরয়েড খাইয়ে কিডনি নষ্ট করে গরুর শরীরে পানি জমা করে। যা বাইরে থেকে দেখতে মোটাতাজা মনে হলেও ওইসব গরু অসুস্থ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে সেসব গরু মরে যায়। তাই এসব গরুর মালিকরা যেকোন মূল্যে অসুস্থ গরুগুলো বিক্রি করে দেন। দ্বিতীয়ত হল অনেক খামারি আছেন যারা কিছুটা ঋণগ্রস্ত থাকেন। কোরবানির ঈদকে লক্ষ্য রেখে গরু লালন-পালন করেন। তারা অনেক সময় কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। কিছু অনভিজ্ঞ মৌসুমী বেপারি এবং কিছু দূর-দুরান্তের বেপারি আছেন তাদের কোন খামার নেই। কোরবানির আগের দিনের মধ্যে তারা গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য। কারণ অবিক্রিত গরু রাখার মত জায়গা তাদের নেই। এছাড়া এবার মহামারীর কারণে কোরবানিদাতার সংখ্যা কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় শেষের দিকে গরুর দাম পড়ে গেছে। খামারিদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চিটাগং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নাঈম উদ্দীন পূর্বকোণকে বলেন, কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করতে পারলে লাভ হয়তো একটু বেশি হয়। কিন্ত যারা প্রকৃত খামারি তারা বিক্রি করতে না পারলেও হতাশ হয় না। কারণ সুস্থ গরু যতদিন ইচ্ছা লালন-পালন করা যায়। তাই যেসব খামারি এবার কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করতে পারেনি তারা অবিক্রিত গরু খামারে রেখে দিয়েছেন। দাম পড়ার বড় কারণ হিসেবে মহামারীকেই দায়ী করছেন তিনি। এছাড়াও বেশকিছু কারণ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নাহার এগ্রোর ব্যবস্থপনা পরিচালক রকিবুর রহমান টুটুল গবাদি পশুর মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এবারের কোরবানিকে লক্ষ্য রেখে খামারি প্রয়োজনীয় কোরবানির পশু উৎপাদন করেছিলেন। কিন্তু মহামারীর কারণে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কোরবানি কম হয়েছে। যেকারণে শেষের দিকে দাম কমে গেছে।
কর্ণফুলী থানাধীন জামতলা বাজার এলাকার রয়েল র‌্যাঞ্চ ক্যাটল ফার্মের প্রোপাইটার ফরহাত হাসানও গরুর দাম কমার জন্য মহামারীকে দায়ী করেছেন। করোনাকালে অনেকেই চাকুরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে কোরবানির ঈদে দুই-চার বন্ধু মিলে গরুর ব্যবসায় নেমেছে। তাদের নির্দিষ্ট খামার নেই। একারণে তারা কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। তবে হাটে অসুস্থ গরু আনে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। তারা গরুকে স্টেরয়েড দিয়ে দ্রুত মোটাতাজা করে নিয়ে আসে। এসব গরু কম দামে বিক্রি করলেও তাদের লোকসান হয় না। সুস্থ গরু কখনোই কম দামে বিক্রি করে না। বোয়ালখালী উপজেলার কদুরখীল এলাকার ফাতেহা এগ্রোর পার্টনার ওমর কাইয়ুম পারভেজ পূর্বকোণকে বলেন, তারা এবার ৭০টি গরু বিক্রি করেছেন। ১৭টি অবিক্রিত রয়ে গেছে। তাতে তাদের কোন অসুবিধা হবে না। অবিক্রিত গরুগুলো তারা খামারে রেখে দিয়েছেন। তাছাড়া প্রতি শুক্রবার এশিয়ান হাউজিংয়ের সামনে এবং ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় একটি করে মোট দুইটি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, হঠাৎ করে গরুর ব্যবসায় নামা উচিত নয়।
আনোয়ারার এ জে এস এগ্রো’র স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদ হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, আনোয়ারায় তার খামারে কোরবানিযোগ্য ৪০টি গরু ছিল। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তিনি সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। অতিরিক্ত লাভের আশা করেননি। যারা অতিরিক্ত লাভের আশা করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, কোরবানিতে তার সব গরু বিক্রি না হলেও কোন অসুবিধা ছিল না। কারণ তার খামার আছে। তাছাড়া তিনি সারাবছর সপ্তাহে দুই দিন জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। যারা শুধু কোরবানিকেন্দ্রিক গরুর খামার করেছেন কিংবা উত্তরবঙ্গ থেকে কিনে এনে বিক্রি করেছেন তাদের অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট