চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেকুয়ায় মৎস্য কর্মকর্তার নয়ছয়

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া-পেকুয়া

২৬ জুলাই, ২০২১ | ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

গত ২৮ মে থেকে কারাগারে আছেন পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের উলদিয়া পাড়ার আবুল বশর। মারামারির একটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে জেলে পাঠান বিচারক। কারাগারে থাকাকালীন তার ৮০ শতকের একটি পুকুরকে প্রদর্শনী খামার দেখায় উপজেলা মৎস্য অফিস। তার অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ হাজার টাকা। এ টাকার বিনিময়ে তাকে চুন, সার, খাদ্য, পোনা ও সাইনবোর্ড কিনে দেওয়ার কথা। তবে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো বরাদ্দ পায়নি তার পরিবার। তার স্ত্রী নাছিমা বেগমের দাবি, হয়তো তার স্বামীর নামে বরাদ্দ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বরাদ্দের ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় আরডি (ফলাফল প্রদর্শক) প্রদর্শনীর অধীনে নয়জনের টাকা এভাবে নয়-ছয় করা হয়েছে। গত ১৪ জুন পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে তাদের মাঝে মৎস্য উপকরণ বিতরণ করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়।
এ প্রকল্পে রাজাখালীর মৌলভীপাড়ার বদরুল আলমকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৫ হাজার টাকা। তাকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা মূল্যের ১০ বস্তা খাদ্য, পোনা কিনতে ১১ হাজার টাকা ও ৫শ টাকা দামের একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে তার জন্য ২৩ হাজার টাকা খরচ করা হয়। বদরুল বলেন, আমার কার্প মিশ্র চাষ প্রদর্শনী খামারের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে জানি না। তবে আমি ২৩ হাজার টাকা মূল্যের উপকরণ পেয়েছি।
পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সিরাদিয়া গ্রামের বাদশা মিয়ার ৮০ শতক জমিকে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রদর্শনী খামার দেখানো হয়। তার প্রদর্শনী খামারের উপকরণের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাদশা মিয়া বলেন, তাকে পাঁচ বস্তা খাদ্য (প্রতি বস্তা ৬০০ টাকা) ও একটি সাইনবোর্ড সরবরাহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তাকে সাড়ে তিন হাজার টাকার উপকরণ দেওয়া হয়।
একইভাবে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নন্দীরপাড়ার আবু ছালেককে ৫০ হাজার টাকা, বকসু চৌকিদারপাড়ার আরমানুল ওসমান চৌধুরীকে ৫০ হাজার টাকা, সুতাবেপারী পাড়ার তৌহিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার মোস্তফা কামালের নামে ৫০ হাজার টাকা উপকরণ কিনতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দ থেকে তাদের প্রত্যেককে ১৫-২৫ হাজার টাকার উপকরণ দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পে নাম আছে উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের প্রসিদ্ধ খামারি জাহেদুল ইসলামের। তিনি বলেন, তার নামে ৮০ শতক পুকুরে প্রদর্শনী হিসেবে পাবদা মাছ চাষের জন্য চুন, সার, খাদ্য, পোনা ও সাইনবোর্ড কিনতে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ৫০ পয়সাও পাননি। তবে, তাকে রাজস্ব খাতের (মুজিববর্ষের) আরেকটি প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার টাকার পাবদা মাছের পোনা সরবরাহ করা হয়। আরডি প্রদর্শনী প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকা ও রাজস্ব খাতের প্রকল্পের ১০ হাজার টাকা মৎস্য কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন।
তাছাড়া, প্রশিক্ষণের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে পেকুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমনকি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য দুপুরের দুই বেলা খাবার ও দুই বেলা নাস্তার অন্তত ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের সবগুলো অভিযোগ অস্বীকার করে পেকুয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন বলেন, জাহেদুলের জন্য পোনা আনা হচ্ছে। বশরের আরেকজন অংশীদার আছে তাকে উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তবে, সব প্রকল্প এখনও বাস্তবায়নাধীন। আমাকে সময় দিতে হবে। প্রকল্পগুলো আমি বাস্তবায়ন করবো।
প্রশিক্ষণের ভাতা আত্মসাতের ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন বলেন, আরডি ও এফএফদের দুটি প্রশিক্ষণের একটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। লকডাউনের কারণে আরেকটি প্রশিক্ষণ এখনও করা হয়নি। তবে প্রথম দফার প্রশিক্ষণে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। আর উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণে সবাইকে ভাতার টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই সময় রমজান থাকায় খাবার বা নাস্তা দেওয়া হয়নি।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হলে ছাড় দেওয়া হবে না। উত্থাপিত অভিযোগগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট