চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সচেতন হতে হবে

ভয়াল ২৯ এপ্রিল স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তারা

পূর্বকোণ ডেস্ক

৩০ এপ্রিল, ২০১৯ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজ : ’৯১-এর ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের শোকাবহ দিনের স্মরণে পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজে এক
আলোচনা সভা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকের হোছাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ বশির উদ্দিন আহমদ কনক, অধ্যাপক মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, শিক্ষার্থী ইফতেখারুল ইসলাম ও নিলুফা ইয়াছমিন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান।
বক্তারা ১৯৯১ ও ১৯৬০ সালের প্রলয়ংকরী ঘৃর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাঁশখালী জনপদসহ দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাণহানি ও যে ভয়াবহ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তা আলোচনা করেন। এ উপলক্ষে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।
সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম : সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে ১৯৯১’র ২৯ এপ্রিল ভয়াল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় নিহত ও ২০১৭ সালে ১০ এপ্রিল সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটে নৌ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ২৯ এপ্রিল বাদ আছর হালিশহরস্থ এ-ব্লক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পবিত্র খতমে কোরআন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নিহতদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, মো. আবুল কাশেম দুলাল, মো. আবু ইউসুফ রিপন, মো. জিয়াউল হাসান, মুহাম্মদ মনিরুল মাওলা, মো. ইয়াসিন মামুন, কাজী জিয়া উদ্দিন সোহেল, কাজী ফারহান আব্বাস, মো. ফিরোজ খান, মো. বাবর উদ্দিন, মো. শাহাজাহান, মো. আবুল বাশার, মো. ফোরকান উদ্দিন, মো. মনজুর আলম, অধ্যাপক মো. শামছুল কবির, মো. মজিবুল মাওলা, মো. তাসলিমুল আলম, নাহিদ মাহমুদ সাহেদ, মুহাম্মদ মোস্তফা, মো. আব্দুল কাদের, সমাজসেবক সাইফুর রহমান লিংকন, মো. মোশারফ হোসাইন, শাহ আলম, কেফায়েত উল্লাহ কায়সার, এমদাদুল করিম সৈকত, আব্দুল হান্নান হীরাসহ চট্টগ্রামস্থ সন্দ্বীপের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নগর জামায়াত : ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ২৫ থেকে ৩০ ফুট পানির উচ্চতায় পুরো চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকা ল-ভ- হয়ে গিয়েছিল। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা, বন্দর, হালিশহর, বাকলিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, সীতাকু-, কুতুবদিয়া-মহেশখালীসহ প্রায় ৬০ হাজার মানুষসহ কয়েক লাখ গবাদি পশু প্রাণ হারিয়েছিল। এছাড়া লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি, গাছপালা উপড়ে যায়। সেই ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, আনোয়ারাসহ উপকূলবাসী। সেই দিনের মর্মান্তিক স্মৃতির কথা আজো উপকূলীয় মানুষেরা ভুলতে পারেনি। প্রতি বছর এদিনটি ঘুরে আসলে সমুদ্র নিকটবর্তী এলাকার মানুষ আতংকগ্রস্ত হয়ে উঠে। এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘ ২৯ বছর পরও এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত পাথরের বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় কুতুবদিয়া-বাঁশখালীসহ উপকূলীর এলাকাগুলো সমুদ্রে বিলীন হওয়ার উপক্রম। তাই অবিলম্বে অরক্ষিত উপকূলবাসীদের রক্ষার জন্য টেকসই পাথরের বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে নগর উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গা, বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর ও বাকলিয়া এলাকায় থানাভিত্তিক ২৯ এপ্রিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথা বলেন।
বন্দর থানা জামায়াত নেতা এস.এম. কামালের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন, এম. নজরুল করিম ও এম.এন. শাহীন প্রমুখ। আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল শেষে ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের জন্য মুনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি : আর নয় পরিবেশ ধ্বংস আসুন সচেতন হই, এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল ২৯ এপ্রিল সোমবার ১৯৯১ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি (বাপউস)’র আয়োজনে নগরীর কাশফুল রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। এ কে এম আবু ইউসুফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন নুর মোহাম্মদ রানা। উদ্বোধক ছিলেন ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। প্রধান আলোচক ছিলেন সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীন। সোহেল তাজের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাছির বিন ইব্রাহিম, তৌহিদুল ইসলাম, অনুতোষ দত্ত বাবু। উপস্থিত ছিলেন ডা. মুহিবুল আলম, নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, সোমেন দাশ, আবরার হোসেন, মোহিত পাল, স্বপ্না পাল, নিঝুম দাশ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রকৃতির বৈরি আচরণ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। এছাড়া মানব সৃষ্ট বিপদের মুখোমুখি আমরা নিজেরাই হচ্ছি প্রতিনিয়ত। নিজেরা ধ্বংস করছি সবুজ বনাঞ্চল, কেটে উজাড় করছি গাছ-গাছালি। আর অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে আমাদের প্রকৃতি। আলোচনা সভা শেষে ২৯ এপ্রিল নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
সন্দীপনা : ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে সন্দীপনা কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গীত, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা ও লোককলা ও সংগীত বিভাগের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচি দোস্ত বিল্ডিং চত্বর ও সন্দীপনা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল ‘ভেড়িবাঁধ ও বনায়ন করে উপকূলবাসীর মানব প্রাকৃতিক সম্পদ ঝুঁকি মুক্ত করা সম্ভব’ শীর্ষক আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা, র‌্যালি, আনোয়ারার খোর্দ গহিরায় ভেড়িবাঁধে প্রতীকি মাটি ফেলা প্রভৃতি। সকাল ৯টায় নিহতদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা মো. হামিদ নুরী। বিকেল সাড়ে ৩ টায় ভাষ্কর ডি কে দাশ (মামুন) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অতিথি ছিলেন ব্যাংকার নুরুল আরশাদ চৌধুরী, ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী, শিল্পী এম এ হাশেম, নাট্যজন শেখ শওকত ইকবাল, বাবুল দাশ, এম এ সালাম, জসীম উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ও মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়াসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপসমূহে আজও পর্যাপ্ত ভেড়িবাঁধ তৈরি না হওয়ার কারণে উপকূলবর্তী মানব সম্পদ, কৃষি সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে সন্দীপনা মহেশখালী শাখা হোয়ানক টাইম বাজার প্রাঙ্গণে, সন্দীপনা নোয়াখালী শাখা চৌমুহনী সংগঠন কার্যালয়ে ও সন্দীপনা কুতুবদিয়া শাখা বড়ঘোপ বিদ্যুৎমার্কেট সংলগ্ন মাঠে গণ সচেতনামূলক আলোচনা, মোনাজাত ও বিশেষ প্রার্থনা ও দুর্যোগকালীন সংকট মোকাবেলায় মহড়াসহ ব্যাপক কর্মসূচি পালন করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট