চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দ্বিগুণ যাত্রী দ্বিগুণ ভাড়া

ইমরান বিন ছবুর 

২৫ জুন, ২০২১ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

মো. ইরফানুল হক। আনোয়ারা উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। করোনাকালীন সময়ে পাঠদান বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন কাজে যেতে হচ্ছে বিদ্যালয়ে। নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে আনোয়ারার গন্তব্যে যেতে প্রতিবারই গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া। আগে যেখানে ৬০-৭০ টাকায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন এখন সেই একই পথে দিতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। এছাড়া, দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই গণপরিবহনে। উভয় সিটে যাত্রী নেয়ার পর দাঁড়িয়েও যাত্রী নিচ্ছে। আর এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলেই পরিবহন শ্রমিকের হামলার স্বীকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ এই শিক্ষকের।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় গত বুধবার বাস চালক ও হেলপারের হেনস্তার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-মার্কেট রুটের ৩ নম্বর একটি বাসের চালক ও হেলপার ওই শিক্ষার্থীকে হেন্তা করেন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার একই রুটের তিনটি বাস অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম স্মৃতি মায়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে মো. ইরফানুল হক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আমার বিদ্যালয়ে যাতায়াতে খরচ হতো মাত্র ৬০-৭০ টাকা। এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। দুই নম্বর গেট থেকে টেম্পোতে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১২ টাকা এখন যা নিচ্ছে ২৫ টাকা। অন্যদিকে ব্রিজ থেকে আনোয়ারা চৌমুহনী ভাড়া ছিল ১৫ টাকা এখন যা নিচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এসব পরিবহনে আপনি স্বাস্থ্যবিধি দেখবেন না। এছাড়া, তাদের (পরিবহন শ্রমিক) ইচ্ছে হলে মাঝপথে গিয়ে নামিয়ে দেয়।

তবে এই অভিযোগ শুধুমাত্র একজন ইরফানের নয়। তার মত অসংখ্য যাত্রী সম্প্রতি গণপরিবহনে যাতায়াত করতে গিয়ে বাজে অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছেন। সম্প্রতি কেউ কেউ এসব অভিজ্ঞতার কথা ও ছবি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরছেন। গত ১৩ জুন বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রতিবাদ করেন এক যাত্রী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১ নং রুটের (কালুরঘাট-নিউমার্কেট) একটি গাড়ির চালক ও হেলপার মিলে এক যাত্রীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। ওই বাসে থাকা অন্য এক যাত্রী ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে যা ভাইরাল হয়।

চট্টগ্রামের জেলা ও দূরপাল্লার পরিবহনে এক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহনের চিত্র দেখা গেলেও নগরীর অভ্যন্তরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। শাহ আমানত সেতু থেকে শুরু করে অক্সিজেন মোড়, কর্নেলহাট এবং পতেঙ্গা ও বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত একই চিত্র দেখা যায়। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। নগরীর বিভিন্ন রুটে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে টিআই এডমিন (পশ্চিম) বিপ্লব দে বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার দায়ে গত ২৪ দিনে আমার জোনে ৪৬০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিটি মামলার বিপরীতে দিতে হবে তিন হাজার টাকা। এছাড়া, কেউ যদি আমাদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব। এব্যাপারে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে, গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত (দক্ষিণ জোনে) ৫১টি মামলায় এক লাখ ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান দক্ষিণ জোনের টিআই এডমিন মো. মহিউদ্দিন।

অভিযোগ করে নগরীর ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানার জুনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ইপিজেড থেকে নিউমার্কেট- লালদিঘি স্বাভাবিক ভাড়া ১০ টাকা হলেও এখন ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। একদিকে পরিবহন শ্রমিকরা টাকা দ্বিগুণ নিচ্ছে, অন্যদিকে তারা আবার যাত্রীও দ্বিগুণ নিচ্ছে। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই বলে, না পোষালে গাড়ি থেকে নেমে যান। এর থেকে বেশি কথা বলতে গেলে চালক ও হেলপারের হেনস্তা বা হামলার স্বীকার হতে হয়।

জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে আমরা সোচ্চার রয়েছি। আমরা আশা করছি সরকার এ বিষয়ে মনোযোগী হবেন। ভাড়া নৈরাজ্যের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছি। আমাদের সংগঠন থেকে কর্মসূচির পক্ষে পরিকল্পনা নিয়েছি কিন্তু করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি হওয়ায় এখনো কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, করোনার এই ভয়াবহ সময়ে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ গণপরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় পরিবহন শ্রমিকরা একদিকে যেমন অতিরিক্ত বা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। একইসাথে স্বাস্থবিধি না মেনে নিয়মের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছে। আর কেউ এর প্রতিবাদ করলে হামলার স্বীকার হতে হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট