চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পপি বীজের গন্তব্যের খোঁজে সিআইডি

নাজিম মুহাম্মদ

২৪ জুন, ২০২১ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হওয়া নিষিদ্ধ পপি বীজের গন্তব্যস্থল খুঁজছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মালয়েশিয়া থেকে সরিষা বীজ ঘোষণা দিয়ে ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই ৪৩ হাজার ১৪৬ কেজি নিষিদ্ধ মাদকের উৎস পপি বীজ আমদানি করে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট মিলে মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ এ পণ্য আমদানি করেছে। যার কারণে সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হবার পাশাপাশি দেশে মাদক বিস্তারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তাকমিম হাসান বাদি হয়ে গত ৩ জুন বন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ শরীফ জানান, বান্দরবানের দুর্গম এলাকাগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পপির চাষ হয়। তবে আমদানিকারক ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা বিপুল পরিমাণ এ পপি বীজের গন্তব্যস্থল নিয়ে কাজ করছি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পপি বীজের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার চকবাজারের ২২/১ আলি হোসাইন খান রোডের আজমান ট্রেড সেন্টারের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ রাজু আহমেদ। তিনি মালেশিয়া থেকে সরিষা বীজ ঘোষণা দিয়ে দুই কন্টেইনার বীজ আমদানি করেন। আমদানিকারকের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের শেখ মুজিব রোডের চৌমুহনী এলাকার হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী অখিল চন্দ্র ম-ল পণ্য খালাসের জন্য গত ১৮ এপ্রিল বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমসের এআরআই (অডিট ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ) কর্মকর্তারা গত ২১ এপ্রিল দুপুর দেড়টায় বীজ ভর্তি কন্টেইনার তল্লাশি করতে আটক করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আমদানিকারকের মনোনীত এজেন্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় সহায়তা না করলেও বন্দরের পরীক্ষণ ইয়ার্ডে গত ২২ এপ্রিল কন্টেইনার খুলে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাকালে দেখা যায়, চালানটিতে ঘোষণা মোতাবেক একটি পণ্য থাকলেও কায়িক পরীক্ষাকালে দুই ধরনের পণ্য দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পরীক্ষাকালে পণ্যের নমুনাদৃষ্টে পণ্যটি শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকার গেন্ডারিয়ায় রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য আমদানি করা বীজের নমুনা পাঠানো হয়।
গত ২৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ রাসায়নিক পরীক্ষাগার থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরিষাবীজ ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা ৫৪ হাজার কেজি বীজের মধ্যে ৪৩ হাজার ১৪৬ কেজি নিষিদ্ধ পপি বীজ রয়েছে।
পপি কি : তথ্য উপাত্ত ঘেটে জানা যায়, মরণ নেশার একটি ভয়ঙ্কর নাম হেরোইন। এর মূল উৎস হচ্ছে পপি গাছের ফলের বীজাধার থেকে উৎপাদিত তরল আফিম আঠা এবং এ আফিমকে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্রাণঘাতী মাদক হেরোইন। পপি নামের এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম পেপার সমনিফেরাম। পৃথিবীতে মোট ৪শ প্রজাতির পপি রয়েছে, যার বেশিরভাগই উদ্ভিদ এবং কিছু লতাগুল্ম প্রকৃতির এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ক্যালিফোনিয়া, ফ্লান্ডার্স ও ওরিয়েন্টাল প্রজাতি। পপি থেকে তৈরি হয় কোকেন, আফিম, মারিজুয়ানা, ক্যানাবিস হেরোইন, ইনজেকশনের মাধ্যমে নেয়া বিভিন্ন ধরনের নেশার মারাত্মক সব মাদকদ্রব্য। এসব মাদক এতটাই ক্ষতিকর যে, তা ধারণারও অতীত।
আফিম পপিতে অন্যান্য রাসায়নিক ছাড়াও ২৫ ধরনের উপাদান রয়েছে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে মরফিনই প্রধান। আফিমের মধ্যে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মরফিন, ২ থেকে ৫ শতাংশ নারকোটিন, ০.১ থেকে .২৫ শতাংশ কোডিন, ০.৫ থেকে ২ শতাংশ প্যাপভারিন, ০.১৫ থেকে ০.৫০ শতাংশ থিবেন এবং ০.১ থেকে ০.৪ শতাংশ নাসিন রয়েছে। এ কারণেই পপিকে বলা হয় সব মাদকের মা।
চলতি মাসের জানুয়ারিতে যৌথ বাহিনীর রুমার ১০ একর জায়গায় ১২ টি পপি ক্ষেত এবং চলতি বছরে প্রায় ২০ একর পপি ক্ষেত ধ্বংস করা হয়।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট