চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিলছে না গভীর নলকূপে পানি

বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে ১০ ফুট

মোহাম্মদ আলী

২৩ জুন, ২০২১ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

শিল্পায়ন, কৃষি ও খাবার পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরশীলতার কারণে চট্টগ্রামে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। রয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা ও অনাবৃষ্টিও। এতে মাটির নিচে পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নেমে গেছে। প্রতি বছর নামছে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ ফুট। তাতে গ্রামে হস্তচালিত গভীর নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, পটিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, কর্ণফুলীসহ চট্টগ্রামের প্রত্যেক উপজেলায় শিল্পায়নের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। শিল্পায়নের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা বাড়ছে। একই সাথে বেড়েছে কৃষিতেও। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এতে কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। পানি স্তর নেমে যাওয়ার কারণে হস্তচালিত গভীর নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এসব বসানো বন্ধ করে দেয়। এরপর সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ বসানো শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত আড়াই দশকে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে ২ হাজার ৫৮৩টি। এর মধ্যে মিরসরাই ৩৭৩টি, সীতাকু-ে ৬৯টি, হাটহাজারী ২৩৭টি, ফটিকছড়ি ৯৭টি, রাউজানে ১৫৪টি, রাঙ্গুনিয়ায় ১৩৫টি, সন্দ্বীপে ৬৬টি, পটিয়ায় ১৭৮টি, বোয়ালখালীতে ৮৯টি, আনোয়ারায় ২৯০টি, বাঁশখালী ২৪১টি, লোহাগাড়ায় ১৬৭টি, সাতকানিয়ায় ৪২৭টি, চন্দনাইশে ৩৫টি এবং কর্ণফুলীতে ২৫টি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন রায় দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নেমে গেছে। প্রতি বছর নামছে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ ফুট। মূলত শিল্পায়ন, কৃষি এবং খাবার পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরশীলতার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যার কারণে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে হস্তচালিত নলকূপ বসানো বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ বসানো শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।’

এদিকে চট্টগ্রাম শহরেও নেমেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট করে পানি স্তর নেমেছে। এ কারণে দুই দশক আগে থেকে হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে। সারফেস ওয়াটার বৃদ্ধির ফলে ওয়াসা ইতোমধ্যে বহু গভীর নলকূপ বন্ধ করে দেয়।

জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত উত্তোলন, অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অসংখ্য নলকূপের পানি উত্তোলন বন্ধ করে দেয় ওয়াসা। ওয়াসার মোট গভীর নলকূপ রয়েছে ৯৬টি। এগুলোতে দৈনিক পানি উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪ কোটি লিটার। বর্তমানে প্রায় অর্ধেক নলকূপ বন্ধ রাখা হয়েছে।

ওয়াসার মড-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী বলেন, ‘চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে।

এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেওয়া যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাসনও বাড়ছে। এ কারণে কংক্রিটের আচ্ছাদনও বেড়েছে। যার ফলে বৃষ্টির পানি সরাসরি মাটিতে পৌঁছে না। এতে ভুগর্ভস্থ পানির প্রাকৃতিকভাবে জমা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে সুপেয় পানির আশায় বিভিন্ন গভীরতায় নলকূপ বসানোর হারও বেড়েেেছ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিনটি উপায়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ করা সম্ভব। উপাায়গুলো হচ্ছে- মাটির স্তরের মাধ্যমে ভুগর্ভে পানির প্রবেশ ঘটানো। ইতোমধ্যে দেশে অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি দিয়ে কৃত্রিমভাবে ভুগর্ভে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম ট্রাফিক লোড থাকার রাস্তাসহ অন্যান্য কংক্রিট আচ্ছাদনের কাজে ছিদ্রযুক্ত কংক্রিটের ব্যবহার করা। যাতে বৃষ্টির পানি অবাধে ভূমিতে পৌঁছায় এবং বিকল্প পানির উৎসের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মাটির উপরিভাগের পানি অর্থাৎ পুকুর বা নদীর পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট