চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফ্রেশ সবজি পেতে ডাক্তার দম্পত্তির ছাদ বাগান

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ জুলাই, ২০১৯ | ১:৪১ পূর্বাহ্ণ

ফরমালিনের এ বাজারে বিষমুক্ত সবজি পেতে ভবনের ছাদে সবুজের বাগান গড়ে তুলেছেন এক ডাক্তার দম্পত্তি। মানব সেবায় ব্যস্ত ডাক্তার দম্পত্তি মোহাম্মদ শাহীন ও শাহনাজ পারভীন বাড়ির ছাদে সাজিয়েছেন তাদের সবুজের সংসার। কি নেই তাদের এ সবুজের সংসারে? বাগানজুড়ে শাক সবজি, ফুল ও নানা ধরনের ফলের চারার সমাহার। তাইতো নগরীর নাছিরাবাদ উইমেন কলেজের মোড়ের পূর্ব পাশে থাকা ডাক্তার দম্পত্তির চারতলা বাড়িটির আশপাশের বাতাসে ভাসতে থাকে ফল আর ফুলের ঘ্রাণ।
কর্মব্যস্ততার মাঝে ২০১৩ সালে বিষমুক্ত সবজি খাওয়ার জন্য পুঁইশাক আর লাউয়ের গাছ রোপণ করে অনেকটা শখের বসে ছাদ বাগান শুরু করেন এ ডাক্তার দম্পত্তি। শতাধিক জাতের ফল ও ফুলের গাছে যা এখন রূপ নেয় সবুজ সংসারে। ডাক্তার দম্পত্তির সাজানো এ সবুজ সংসারে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট টপে যেমন পাপড়ি মেলে হাসছে নানা জাতের ফুল তেমনি মাথার উপরে থোকায় থোকায় ঝুলছে আমের ছড়া। বাগানজুড়ে যেমন চাষ করা হয়েছে সবজি, ফুল আর ফল তেমনি করা হয়েছে তেজপাতা, পোলাও পাতা ও ক্যাকটাসসহ ইউরোপিয়ান ফল ড্রাগনের চাষ। এছাড়া ফলের তালিকায় রয়েছে আখ, লিচু, কলা, আনারস, ডালিম, কমলা, লেবু, পেয়ারা, জামরুল, জাম্বুরা, জামরুল, কামরাঙ্গা, আমড়া, আতা, পেঁপে, জাম আর লটকনসহ ২০ প্রজাতির ফল। ফুলের টপে ফুটেছে হাসনা হেনা, বকুল ফুল, রজনীগন্ধা, গোলাপ, কামিনি, জবা, গাধা ফুল ও টাইম ফুলসহ নন্দিনী। সবজি আর শাকের তালিকায় রয়েছে ঢেড়স, লাউ, শসা, শিম, বরবটি, বেগুন, টমোটো, পুঁইশাক, কলমি শাক, কচু শাক, লাল শাক, মুলা শাক, পালং শাক ও কপি শাক।
নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহীন জানান, প্রতিদিন টিভিতে দেখা যাচ্ছে ফরমালিন পণ্যে সয়লাব বাজার। আর এ ফরমালিনের হাত থেকে বাঁচতে ছয় বছর আগে ছাদে সবজি বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই আমি ও আমার স্ত্রী ডা. শাহনাজ পারভীন। পুঁইশাক আর লাউয়ের গাছ রোপণ করে শুরু হয় আমাদের ছাদ বাগানের যাত্রা। আর এখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকি গাছের পরিমাণ।
ব্যস্ততার মাঝে কিভাবে সময় দিতেন এবং গাছের চারা কোথা থেকে সংগ্রহ করতেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বন্দরটিলাতে আমার একটি চেম্বার আছে। সেখান থেকে ফেরার পথে প্রতিদিন নার্সারি যেতাম। যখন যে চারা ভালো লাগতো তখন সেটা এনে মাটি ভর্তি ড্রাম ও টপে পুঁতে দিতাম। পরে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চারাগুলো আমি আর আমার স্ত্রী পরিচর্যা করতাম। তবে এখন আমার বদলি নোয়াখালীতে হয়ে যাওয়ার কারণে বাগানে সময় দিতে পারি না। এখন বাগানের পরিচর্যা অনেকটা একাই করছেন আমার স্ত্রী।
সবুজের এ সমাহারে আসতে কেমন লাগে এবং যে উদ্দেশ্যে এ ছাদ বাগান শুরু করা তা পূরণ হয়েছে কিনা ? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবজির চাহিদা পূরণ করতেই মূলত ছাদ বাগান শুরু করি। তবে সব সবজির চাষ করা সম্ভব নয় তবুও প্রয়োজনীয় সবজিগুলোর চাষ করেছি এবং ভালো ফলনও পেয়েছি। যা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফল ও ফুলের চাষও শুরু করেছি। সকল কর্মব্যস্ততা শেষে যখন বিকেল বেলা আমার স্ত্রীকে নিয়ে ছাদে আসি তখন এক সতেজতা উপলব্ধি হয়। মনে হয় যেন প্রাণ ভরে বিশুদ্ধ নিশ্বাস নিচ্ছি। তাছাড়া বৃষ্টির সময় অন্যরকম ভালো লাগে ছাদে ঘুরে বেড়াতে। মনে হয় এ যেন নিজ হাতে গড়ে তোলা এক স্বর্গ।
ইট-পাথরের এ শহরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বহুতল ভবনে এমন ছাদ বাগান যেমন নিজেদের মনে আনন্দ এনে দিবে তেমনি প্রকৃতিকে দেবে বাঁচার সুযোগ। কেন না, পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার কোটি মানুষ যে পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করেন তার যোগান দাতা এই গাছ। আর যে পরিমাণ বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে তার গ্রহণকারীও এই গাছ। তাই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সকলের গাছ লাগানোর পাশাপাশি উচিত বাগান করা। হোক সেটা ছাদ কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় বলে জানান ডাক্তার দম্পত্তি মোহাম্মদ শাহীন ও শাহনাজ পারভীন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট