চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টেকনাফে ১৩ পাহাড়: কয়েক হাজার পরিবার মৃত্যুঝুঁকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টেকনাফ

১৯ জুন, ২০২১ | ৪:০৩ অপরাহ্ণ

টেকনাফে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে লাখো মানুষ বসবাস করছে। গত কয়েক বছর ধরে টেকনাফ উপজেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে আসছে। বার বার প্রাণহানি এবং প্রশাসনের সতর্কতা সত্ত্বেও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। বর্তমানে টেকনাফের ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে কয়েক হাজার পরিবার মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ এলাকায় সরে যেতে বলা হলেও কেউই শুনছে না প্রশাসনের সতর্কবাণী।

গত ২ সপ্তাহ ধরে টানা ভারী বর্ষণে টেকনাফের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরার আশংকা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে, স্থানীয় ভূমিদস্যু দখলদাররাই এদের আশ্রয় দিয়ে মাসোহারা নিচ্ছে। প্রতিবছর বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা লোক দেখানো অভিযান ও অবৈধ উচ্ছেদ পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে আবারো স্থানীয় ভূমিদস্যুরা বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে রোহিঙ্গাদের বসবাস করার সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে তারা পাহাড়ের পাদদেশে রীতিমত সমাজ গঠন করে বসতি করে বসবাস করে আসছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় স্থানীয় প্রশাসন পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসরত এসব পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়। বেশি ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান করে দেয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পাহাড় কাটার অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছরের  জেল ও ৫ লাখ টাকার জরিমানার বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ পাহাড় কাটার অপরাধে এ পর্যন্ত কাউকে জরিমানা বা শাস্তির আওতায় আনেনি। যে কারণে টেকনাফ উপজেলায় পাহাড় দখল, কর্তন, স্থাপনা তৈরি ও অবৈধ বসবাস অব্যাহত রয়েছে। এর আগেও চিহ্নিত ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরত বাসিন্দাদের উচ্ছেদে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চলমান বর্ষায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে লক্ষাধিক মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে টেকনাফে পাহাড় ধস নিয়ে বাড়ছে আতংক। কয়েক হাজার পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলায় প্রতিবছর বর্ষায় প্রবল বর্ষণে, পাহাড় ধসে নিহতের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরানো হয়নি। টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজি মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বেশিরভাগ  লোকজন দরিদ্র শ্রেণীর। অভাব-অনটনের সংসারে জর্জরিত হয়ে আবার অনেকে শাহপরীরদ্বীপ নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ভিটেবাড়ি হারানোর পর মূলত এক প্রকার বাধ্য হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি  জেনেও তারা বসবাস করে আসছে’।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, এসব পরিবারকে উচ্ছেদ না করে পুনর্বাসনের আওতায় এনে বিকল্প ব্যবস্থা করার। বিগত সময়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিতে থাকা এসব বসতি উচ্ছেদ করা হয়। এসব লোকজন কিছুদিন নীরব থাকার পর ফের একই কায়দায় আগের জায়গায় জড়ো হয়ে এসব অবৈধ বসতি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব অবৈধ বসতি নিমার্ণের পেছনে জড়িত থাকায় তাদেরকে (বসবাসকারী) উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, টানা বর্ষণের আগে থেকে পাহাড় ধসের আশংকায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে  যেতে বার বার বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সরে যেতে বলা হয়েছে। এরপরেও যারা অবস্থান করছেন তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট