চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাল ওদের স্বপ্ন পূরণের দিন

কে. জি. ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া

১৯ জুন, ২০২১ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

জোসনা আকতার (৫৮) এর স্বামী ফজল করিম ২৫ বছর আগে দুরারোগ্য রোগে মারা যান। স্বামীর কোনো ভিটেবাড়ি ছিল না। ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে থাকতে হতো অন্যের আশ্রয়ে। দুই মেয়ে নিয়ে টানাপোড়নের সংসারে জায়গা নিয়ে ঘর করবে এমন সামর্থ্যও নেই বিধবা জোসনা আকতারের। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হতো তাকে। সেই জোসনার দুঃখ ঘুচতে যাচ্ছে। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২ শতক জমিসহ তিনি একটি পাকা ঘর পাবেন। শয়নকক্ষের পাশাপাশি, থাকছে রান্নাঘর ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা।

জোসনা আকতারের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রামে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সকালে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের বহলপুর গ্রামে নতুন বরাদ্দ পাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে জোসনা আকতার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘আগে ভিটেবাড়ি ন আছিল, প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় এহন জায়গা ও ঘরর মালিক অই, খুউব খুশি লার” (আগে ভিটেবাড়ি ছিল না , প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় এখন জায়গা ও ঘরের মালিক হয়েছি। খুব খুশি লাগছে। জোসনা আকতারের মতো রাঙ্গুনিয়ায় নতুন করে ৫০ ভূমি ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে আধাপাকা ঘর। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রোববার (২০ জুন) সকালে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে ঘরগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে শুধু রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী। জোসনা আকতারের পাশের ঘরে থাকবেন আইসক্রিম বিক্রেতা ইউসুফ সুমন (৪৭)। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার উত্তর ঘাটচেক গ্রামে। ইউসুফ এক সময় দিনমজুরি করতো। কয়েক বছর হচ্ছে গ্রামে ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করে। করোনার কারণে এখন সেই ব্যবসাও চলে না। স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান নিয়ে তার সংসার। জানতে চাইলে ইউসুফ সুমন বলেন, জন্মের পর থেকে নানার বাড়িতে থাকতাম। নিজের কোনো জমিজমা ছিল না। বিয়ের পর থেকে ভাড়া ঘরে থাকতে হতো। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে এখন তার নিজস্ব ঘর হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ইছামতি পাড়ের মনজিল খাতুনের ঘরটা এমনিতেই নড়বড়ে ছিল। ঝড়-তুফানের সময় ভয়ে থাকতেন। এরমধ্যে একদিন ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের একটি খুঁটি ভেঙে পড়ে বসতঘর ভেঙ্গে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান বসতঘরের বাসিন্দারা। চোখের সামনে যখন প্রবল অন্ধকার, তখন আলো হয়ে পাশে দাঁড়ান স্থানীয় সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। কয়েক মাসের মধ্যে আধাপাকা নতুন ঘর পেয়ে অনেক খুশি তিনি। রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী ইউনিয়নের বহলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি ও ঘর পেয়েছে এ ধরনের ৩০টি পরিবার। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে আরো ২০টি পরিবার পাকা ঘর পাচ্ছে এবার। সরেজমিনে বেতাগী ইউনিয়নের বহলপুর গিয়ে আরও অনেকের অজানা গল্পগুলো জানা গেল।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে রাঙ্গুনিয়ার ভূমি ও গৃহহীন ৬০৬টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছিল। রাঙ্গুনিয়ায় প্রথম পর্যায়ে আগে দুই শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছেন ১১৫টি পরিবার। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে এবার ৫০ পরিবারকে জমির সঙ্গে ঘর দেওয়া হবে। তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের জন্য পরিবহন খরচসহ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
রোববার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙ্গুনিয়া প্রান্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ চট্টগ্রামের মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত থাকবেন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট