চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘প্রণোদনার’ বাড়তি বরাদ্দ চালের মান পরীক্ষার পর

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ জুন, ২০২১ | ১:০৮ অপরাহ্ণ

ভারত থেকে আমদানি করা চাল কেলেঙ্কারির পর এবার বোরো চাল সংগ্রহেও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। পাহাড়তলী চাল বাজারের পর সরকারি চালের চালবাজির এখন চাক্তাই চালপট্টির একটি সি-িকেটের হাতে জিম্মি। গুদাম কর্মকর্তাদের বশে নিয়ে যাচ্ছেতাই করছে ওই সিন্ডিকেট। অনিয়মের কারণে ‘প্রণোদনার’ বাড়তি চাল বরাদ্দ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। অনিয়মের তদন্ত ও সংগ্রহকৃত বোরো চালের ভৌত পরীক্ষা (মান পরীক্ষা) করেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে খাদ্য বিভাগ।

খাদ্য অধিদপ্তরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ শফিউল আজম গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘খাদ্য গুদামে সংগ্রহকৃত বোরো চালের কারিগরি কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই প্রণোদনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য প্রণোদনার বাড়তি বরাদ্দ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার মিলারদের জন্য একটি বাড়তি সুযোগ দিয়েছিল এবার। কিন্তু সেই বাড়তি সুবিধা নিয়ে খারাপ চাল দেওয়ার সুযোগ নেই। সবার চাল গুদামে রয়েছে। কারিগরি কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রণোদনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ চালের মান খারাপ হলে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চাল সংগ্রহে সরকারের সঙ্গে মিলারদের চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে- বাজার থেকে ধান কিনে শুকিয়ে ও ছাঁটাই (মিলিং করে চালে পরিণত) করে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চাল দিতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ মিলার সেই শর্ত ভঙ্গ করে বাজার থেকে চাল কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করছে। তাও আবার একটি সিন্ডিকেটের কাছে। নগরীতে ২৪টি মিল রয়েছে। একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত সরকারের কাছে চাল বিক্রি করছেন ৪-৫ জন। একটি সিন্ডিকেট ১০-১২টি মিলের বরাদ্দপত্র কিনে নিয়ে তাদের পক্ষে খাদ্যগুদামে চাল দিচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। গুদাম ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে লুটেপুটে খাচ্ছে।

তবে সূত্র জানায়, খাদ্য বিভাগের ভৌত পরীক্ষা ছাড়াও অনিয়ম খতিয়ে দেখছে বিভিন্ন সংস্থা। ইতিমধ্যে বোরো চাল কেলেঙ্কারি সিন্ডিকেটের চাক্তাই চালপট্টির একাধিক মিলারের বিরুদ্ধে তদন্তে মাঠে কাজ শুরু করেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মাঠে নেমেছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা।

চলতি বোরো মৌসুমে সরকার সিদ্ধ চাল কিনছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকায়। আতপ চাল কেজিতে ৩৯ টাকা দরে। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে কেজিপ্রতি ২৭ টাকা দরে। গত বোরো মৌসুমের চেয়ে চালের দাম কেজিতে চার টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর ধানে বেড়েছে মাত্র এক টাকা।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘অতিরিক্ত বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। অনিয়ম-দুর্নীতি করে তো কেউ কোনদিন পার পায়নি।’ বোরো সংগ্রহ নিয়ে আর লেখালেখি না করার অনুরোধ করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইস মিল মালিক সমিতির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়েও বোরো সংগ্রহ চলছে। কিন্তু মহানগরীর বিষয়ে যেভাবে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, সেইভাবে উপজেলা পর্যায়ে হচ্ছে না। অথচ উপজেলা পর্যায়েও একইভাবে অনিয়ম চলে আসছে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট