চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শীতাতপ লোকোমোটিভের যুগে রেল

মিজানুর রহমান 

১৪ জুন, ২০২১ | ১:০১ অপরাহ্ণ

দেশে প্রথমবারের মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভে চলাচল করেছে যাত্রীবাহী ট্রেন। কোরিয়া থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভের একটি দিয়ে গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। তবে ট্রায়াল রান হওয়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভটি ব্যবহার করা হয় চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত।

এরপর পুরনো লোকোমোটিভ সংযুক্ত করে ট্রেনটি সিলেট যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- বর্তমানে রেলের বহরে যেসব লোকোমোটিভ রয়েছে সেগুলো ম্যানুয়াল। নতুন লোকোমোটিভগুলো পুরোটাই ডিজিটাল সিস্টেমে চলবে। লোকোমোটিভের শীতাতপ যন্ত্র চলবে ইঞ্জিনের শক্তি থেকে। এ কারণে ইঞ্জিনের শক্তিও বেশি থাকবে এসব লোকোমোটিভে। বর্তমানে যেসব ইঞ্জিন রয়েছে তা ১ হাজার ৫০০ হর্স পাওয়ারের। নতুন ইঞ্জিনগুলো ২ হাজার ২০০ হর্স পাওয়ারের।

এছাড়া নতুন আনা লোকোমোটিভে রয়েছে নানা অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান- দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক, দ্রুতগতির এবং বিশ্বমানের করতে রেলওয়ের জন্য বিদেশ থেকে ২০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভ আমদানির প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রায় ৭০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০টি মিটারগেজ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভ সরবরাহের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দায় রোটেমের সঙ্গে চুক্তি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

চুক্তি অনুযায়ী গত বুধবার জাহাজে করে ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিটারগেজ লোকোমোটিভ বাংলাদেশে পাঠায় হুন্দায় রোটেম। বাকি ১০টি লোকোমোটিভ আগামী সেপ্টেম্বরে পাঠানোর কথা রয়েছে। দেশে আসা ১০টি লোকোমোটিভ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে রাখা হয়। সেখান থেকে ৩০১৭ নম্বরের লোকোমোটিভটি রবিবার যাত্রীবাহী ট্রেনে সংযৃক্ত করে ট্রায়াল রান দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী পূর্বকোণকে জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি লোকোমোটিভ সংযুক্ত করে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে সকাল ৯টায় আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ১৪ বগির এই ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা ছিলো ৩২৭ জন। যাত্রীবাহী ট্রেনটির চালক ছিলেন লোকোমাস্টার বেলাল উদ্দিন।

প্রথমবারের মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাবে (চালকদের বসার ও ট্রেন পরিচালনার স্থান) বসে ট্রেন পরিচালনা করার পর উচ্ছ্বসিত লোকোমাস্টার বেলাল উদ্দিন। রবিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, এক কথায় অসাধারণ অনুভূতি। ঠাণ্ডা হাওয়ায় ধুলাবালিহীন ক্যাবে বসে ট্রেন পরিচালনা করতে পেরে দারুন লেগেছে। প্রতিটি ট্রেনে এই ধরনের লোকোমোটিভ থাকলে ট্রেন পরিচালনা করা আরো উপভোগের হতো।

রেলওয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক হাসান মনসুর পূর্বকোণকে বলেন- কোরিয়া থেকে আমদানি করা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভগুলোর একটি গতকাল রবিবার যাত্রীবাহী ট্রেনে সংযুক্ত করে ট্রায়াল রান দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভ থাকলেও বাংলাদেশে এই প্রথম।

তিনি বলেন, প্রথম লোকামোটিভ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত ট্রায়াল রান দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য লোকোমোটিভগুলোরও ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হবে। এর মাধ্যমে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দায় রোটেমের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে- তার সব শর্ত মেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভগুলো সরবরাহ করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এসব রেলের বহরে যুক্ত করা হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকোমোটিভ চলাচল শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে চালকরা যেমন স্বাচ্ছন্দে ট্রেন চালাতে পারবেন তেমনি ট্রেন চলাচলও দ্রুত গতির হবে। যার সুফল পাবেন যাত্রীরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট