চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ফটিকছড়িতে হঠাৎ বেড়ে গেছে করোনা রোগী

এস.এম মোরশেদ মুন্না, নাজিরহাট

১৪ জুন, ২০২১ | ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

ফটিকছড়িতে হঠাৎ করেই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ঈদের পর থেকেই করোনা শনাক্তের হার চোখে পড়ছে। উপজেলা সদরের বিশেষায়িত ফটিকছড়ি কোভিড ১৯ হাসপাতালেও বেড়েছে করোনা রোগী। এতে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠায় রয়েছে উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন, সর্বোপরি জনসাধারণ।

ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলায় করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরণ শনাক্তের ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এই আশঙ্কাকে অমূলক মনে করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৩ দিনে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩২২ জন রোগীর কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফলে পজিটিভ এসেছে ৯৬ জনের। এখনো ১২ ও ১৩ জুনের ৮৭ জনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। একদিনে সর্বোচ্চ পজিটিভ ছিলো ২৮ জন। এতে ফটিকছড়ি উপজেলার বাইরে পার্শ্ববর্তী উপজেলার কয়েকজন রোগী রয়েছেন বলে জানা যায়। ফটিকছড়ি উপজেলায় আক্রান্তের হার শতকরা ৪০। চলতি ১৩ জুন (গতকাল) পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ জন।

ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, ফটিকছড়িতে করোনা রোগীর বর্তমান অবস্থান অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা শতকরা ১৩.৬৩, সুস্থতার হার ৮৪.৮৯, আর মৃত্যুহার ১.৪৮। আক্রান্তরা ফটিকছড়ি কোভিড- ১৯ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কিংবা নিজেদের ঘরে আইসোলেশনে অবস্থান করে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন বলে জানা যায়। গত ২১ মে হতে ৩০ শয্যার ফটিকছড়ি কোভিড-১৯ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে  থাকে। গতকাল (১৩ জুন) সর্বোচ্চ সংখ্যক ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ২৩ জন। গত ১৫ দিনে এই হাসপাতাল হতে চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন সর্বমোট ৯৫ জন রোগী। যারমধ্যে ভর্তি সংখ্যা ছিলো ৪৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। রেফার করা হয়েছে ৪জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ১ জন রোগী।

সচেতন মহলের অভিযোগ, ফটিকছড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললে চলে। মাত্র ৫ হতে ১০ ভাগ লোক মাস্ক পরছেন।উপজেলা প্রশাসন বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণসহ সচেতনতামূলক কর্মকা- অব্যাহত রাখলেও মাস্ক না পরায় কাউকে এখনও জরিমানা করা হয়নি বলে জানা গেছে।

ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মরতুজা রেজা হাসান জানান, ফটিকছড়িতে আমার গ্রামের বাড়ি। সেই সূত্রে উপজেলা সদরে আমি দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখছি। ফটিকছড়িতে করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে এই উপজেলায়। সদরে ৫% মানুষও মাস্ক পরছেন না। আমার কাছে অধিকাংশ রোগীই জ¦র নিয়ে আসছেন। যাদের করোনা পরীক্ষা করতে বলছি তাদের অধিকাংশই পজেটিভ। অনেকেই করোনার ভয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। মরতে না চাইলে ফটিকছড়িবাসীকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, বলেন এই চিকিৎসক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী জানান, ফটিকছড়িতে করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। আমরা বিভিন্নভাবে মানুষদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিশেষ করে মাস্ক পড়তে তাগাদা দিচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। এই মহামারীর বিরুদ্ধে একার পক্ষে লড়া সম্ভব নয়। করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সবাইকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে বড় ধরনের কোন ঝুঁকি আছে বলে মনে হয় না।

জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সায়েদুল আরেফীন জানান, মানুষ সচেতন না হলে আক্রান্তের হার বাড়বে। ফটিকছড়িতে করোনায় ভারতীয় ধরণ শনাক্তের কোন ঝুঁকি নেই। মানুষকে সচেতন করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত কঠোর বিধি-নিষেধ উপজেলাবাসীদের জানিয়ে দিয়েছি। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো। সর্বোপরি আক্রান্তের হার কমানোর লক্ষ্যে ফটিকছড়িবাসীকে আরো সচেতন করতে আমাদের শতভাগ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট