চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আউটসোর্সিং থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

চমেক হাসপাতাল

ইমাম হোসাইন রাজু

৩০ জুন, ২০১৯ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত কর্মচারীদের মাসিক বেতন থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে কর্মচারীদের প্রাপ্ত বেতন পরিশোধ করা হলেও বিভিন্ন কৌশলে নিযুক্ত দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চাকরি থেকে বের করে দেবার ভয় দেখিয়ে মাসিক বেতন থেকে একটি অংশ কেটে রেখে দেয় প্রতিষ্ঠান দুটি। যদিও এসব বিষয় সত্য নয় বলে দাবি দুই প্রতিষ্ঠানের।
তথ্য মতে, বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে স্পেশাল-আয়া-বয়দের ছাঁটাইয়ের পর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ১০৯ জন কর্মচারী নিয়োগের অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর পর টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত জনবল নিয়োগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে টেন্ডার পায় জমজম এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও ১০০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগের টেন্ডার দেয়। সে টেন্ডারপ্রাপ্ত হয় গালফ সিকিউটিরি সার্ভিস নামে আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
টেন্ডারের চুক্তি অনুযায়ী, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতি কর্মচারী বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন হাসপাতাল থেকে পেয়ে থাকে। এরমধ্যে জমজম এন্টারপ্রাইজ অফিস সহায়ক হিসেবে জনপ্রতি (ভ্যাট-কর বাদে) ১২শ টাকা করে আর গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রতি ৩৮০ টাকা করে পেয়ে থাকেন। অফিস সহায়কের বেতন নির্ধারণ করা হয় ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা আর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন ধরা হয় ৯ হাজার ৮৮৩.১২ পয়সা। এসব টাকা নিযুক্ত কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এরমধ্যে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) মেডিকেল কলেজ শাখায় আর অফিস সহকারীদের অগ্রণী ব্যাংকের একই শাখায় পৃথকভাবে পাঠানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কর্মচারীরা মাসের নির্ধারিত সময়ে এসব টাকা তুলতে গেলে তাদের নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্ধারিত পরিমাণে কিছু অংশ রেখে দেন। তারমধ্যে অফিস সহকারীদের কাছ থেকে ৯৫০ থেকে ১৫০০ টাকা আর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাছ থেকে ৮৮৩ থেকে ১০০০ টাকা রেখে দেন। আবার অনেক কর্মচারীদের চেক বইয়ে অগ্রিম স্বাক্ষর নিয়ে চেক বইগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেই রেখে দেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে একাধিক কর্মচারী পূর্বকোণকে বলেন, ‘চাকরি থেকে বের করে দিবে এমন ভয়ভীতি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতেন তারা। চাকরি হারানোর ভয়ে এসব কথা কাউকে বলতে পারিনি। তারা হাসপাতাল থেকেও কমিশন নেয় আবার আমাদের কাছ থেকেও কমিশনের কথা বলে অনেকগুলো টাকা নিয়ে নেয়। এভাবে হলে আমরা কিভাবে চলবো। সারাদিন কষ্ট করে মাস শেষ কিছু পাই, এর মধ্যে যদি কমিশনের নামে কেটেই নিয়ে যায় তাহলে হাতে আর কি থাকে’।
এদিকে, এসব বিষয়ে একাধিক মৌখিক অভিযোগ হাসপাতালের উপ-পরিচালকের কাছেও এসেছে। সম্প্রতি এক নারী কর্মচারী অভিযোগ করতে আসলে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী কর্মচারী বলেন, ‘নিয়োগ দেওয়ার পর চেক বই রেখে দিয়েছেন তারা। আমাকে বলেছে-খালি পাতায় স্বাক্ষর দিতে, আমি দিয়েছি। না দিলে নাকি বেতন তুলতে পারবো না। এইসব বলে আমার কাছ থেকে চেক বই রেখেও দিয়েছেন। পরে জানায় মাসের নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে গেলে টাকা দিবে’। কতটাকা বেতন তুলেছে জানতে চাইলে ওই নারী বলেন,‘ আমাকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়েছে। এটা নাকি সরকার থেকে নির্ধারণ করা’।
তথ্য বলছে, একজন অফিস সহায়কের বেতন থেকে যদি ১৫০০ টাকা করে কেটে রাখা হয় তাহলে ১০৯ জন থেকে প্রতিমাসে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়। আর ১০০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাছ থেকে যদি ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়, তাহলে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা করে আদায় করছে।
এরমধ্যেই আজই শেষ হচ্ছে এই দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তি। নতুন করে আবার টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজও চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি, নতুন টেন্ডার কে পেয়েছেন।
টাকা আদায়ের বিষয়ে জমজম এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা প্রণয় বড়–য়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘নানাজনে নানা ধরনের কথাই বলবে। এসব আমরাও শুনেছি অনেক। তবে এসব সত্য নয়। সব মিথ্যে’।
আর গালফ সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মকর্তা রোমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রত্যেকের বেতন তাদের নিজ নিজ একাউন্টে চলে যায়। তাহলে আমরা তাদের টাকা কিভাবে নেব। এসব কথা মিথ্যে। যার জন্য এবার আমরাও আর টেন্ডার দেইনি’।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে প্রতি কর্মচারীর একাউন্টে তাদের বেতন চলে যায়। তারা ঠিকাদারকে কেন টাকা দেয়, সেটা তারা বুঝবে। আমাদের কাছ থেকেতো তাদের বেতন ঠিকমতই পরিশোধ করা হচ্ছে। টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে- এমন কয়েকটি মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে কেউই লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে হয়তো আমরা একটা ব্যবস্থা নিতাম’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট