চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাথে মতবিনিময়ে সুজন

জীর্ণ দশামুক্ত মানসম্মত গণপরিবহন চালু করুন

৩০ জুন, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে চলাচলরত গণপরিবহনকে জীর্ণ শীর্ণ দশা থেকে মুক্ত করে মানসম্মত গণপরিবহন চালু করার জন্য জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দের নিকট আহবান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি গতকাল শনিবার বেলা ১২ টায় আন্দরকিল্লা নজির আহমদ সড়কস্থ সংগঠনের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ আহবান জানান। এ সময় খোরশেদ আলম সুজন বলেন, গণপরিবহন জনজীবনে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। নগরীতে জীবন জীবিকা এবং অন্যান্য প্রয়োজনে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই গণপরিবহনের উপর নির্ভর করে। কিন্তু সেই গণ

পরিবহনে নেই কোন শৃঙ্খলা। যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রকট আকার ধারণ করছে গণপরিবহনে নৈরাজ্য। পরিবহন মালিক, ড্রাইভার, কন্ডাক্টর এবং হেলপারদের কাছে যেন অসহায় সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, কিশোর চালক কর্তৃক বেপরোয়া গাড়ি চালানো, দুর্ঘটনা সবমিলিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলছে নগরীর জনজীবন। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে বাসে বাসে ধাক্কা লাগানো, যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ, গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা এসব প্রতিদিনকার চিত্র। অথচ এ নিয়ে মালিকপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। এসব ছাড়াও অহরহ চলছে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাস। ভাঙ্গা সিট, ছারপোকা, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসন, ভাড়া নিয়ে চরম অনিয়ম করা হচ্ছে এসব গণপরিবহনে। তাছাড়া অফিস ছুটির সময় বিভিন্ন কারখানার রিজার্ভ ভাড়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ গণপরিবহন। ফলত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রী সাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গণপরিবহন না পেয়ে উচ্চ মূল্যে অন্যান্য পরিবহন করে ঘরে ফিরে আসতে হয় যাত্রী সাধারণের। ফলত একদিকে যেমন অর্থের অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে বিপুল কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নগরীর বিপুল সংখ্যক যাত্রী সাধারণের জন্য পর্যাপ্ত বিআরটিসির কোন বাস সার্ভিস নেই। এতে করে বাস মালিক এবং ড্রাইভারদের নিকট জিম্মি হয়ে রয়েছে পুরো নগরবাসী। তিনি নগরীর বাস সার্ভিসগুলোকে সিটি গেট থেকে কুমিরা, অন্যদিকে অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী এবং অপরদিকে নতুন ব্রিজ থেকে পটিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করার আহবান জানান। এছাড়া যাত্রী সাধারণের সামর্থ্য অনুযায়ী আরো বেশ কিছু এসি নন এসি কাউন্টার সার্ভিস বাস চালু করার জন্য পরিবহন মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। জনাব সুজন গণপরিবহনের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে পরিবহন মালিক, শ্রমিক এবং নাগরিক উদ্যোগ সমন্বয়ে বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতামূলক সভা করার ঘোষণা দেন এবং গণপরিবহন মালিকদের স্বল্প সুদে প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি বিনীত আহবান জানান।
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে যাত্রী সাধারণের নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মতবিনিময় করতে আসায় অভিনন্দন জানান। এ সময় নেতৃবৃন্দ নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন কর্তৃক উপস্থাপিত মতামত বাস্তবসম্মত বলে অভিমত প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাস্তবিক অর্থেই পরিবহন ব্যবস্থা বর্তমান সময়ে কঠিন সময় পার করছে। প্রশিক্ষিত চালক- হেলপারের অভাব, যানজট, ট্যাক্স, টোকেন এবং গাড়ি চালনায় আনুসঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন মালিকরা কষ্টসাধ্য জীবন যাপন করছে। তার উপর প্রতিনিয়তই অযাচিত মামলা এবং হয়রানির সম্মুখীন হতে হয় পরিবহন মালিকদের। এতে করে সত্যিকার পরিবহন মালিকরা পরিবহন ব্যবসা থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া নগরীতে নেই কোন স্থায়ী বাস কিংবা ট্রাক টার্মিনাল। যার ফলে রাস্তায় বাস ট্রাক রাখতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় পরিবহন মালিকদের। এছাড়া দিনের বেলায় বিভিন্ন কারখানার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল করলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফলত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহন মালিকগণ। তাছাড়া দারোগাহাটে স্থাপিত ওয়েয়িং স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের পরিবহন ব্যবসায় বিশাল ধস নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন মালিকগণ। সারা বাংলাদেশে একই নিয়মে ওয়েয়িং স্কেল পরিচালিত হলেও শুধুমাত্র চট্টগ্রামে স্থাপিত এই ওয়েয়িং স্কেলের কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে পরিবহন মালিকরা। যার কারণে প্রতিদিনই ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হচ্ছে পরিবহন মালিকগণ। মালিকগণ ওয়েয়িং স্কেলের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সুজনকে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানান। এছাড়া বকেয়া ট্যাক্স টোকেন মওকুফ করার জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের কার্যকরী সভাপতি হাজি জহুর আহমদ কোম্পানির সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল, সিটি বাস ওনার্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মিয়া, হাজি মো. ইলিয়াছ, মো. হাসান, হাবিবুর রহমান এবং নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজি মো. হোসেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট