চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘অপরিকল্পিত’ খাল খননে দুর্ভোগ

ইফতেখারুল ইসলাম 

১৮ মে, ২০২১ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

জলাবদ্ধতা আতঙ্কে নগরবাসী। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ বর্ষার আগে আরো মাসখানেক চালিয়ে যেতে চায় সংশ্লিষ্টরা। তাই ভারী বৃষ্টিপাত না হলে অন্তত এক মাস আগে খালের বাঁধগুলো অপসারণ হচ্ছে না। এমনটিই জানালেন প্রকল্প পরিচালক।

এদিকে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। ঈদের দিন সকালের এক ঘণ্টার বৃষ্টি নগরবাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা, মাত্র এক ঘন্টার বৃষ্টির কারণে ঈদের দিন ঘর থেকে কেউ বের হতে পারেনি। নিচু এলাকার বাসিন্দাদের বাসা এবং দোকানের মালামাল ভিজে নষ্ট হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে কি অবস্থা হবে!

সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী চান অন্তত দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব বাঁধ অপসারণ হোক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, সিডিএ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাষের সাথে ফোনে কথা বলেছি। খালের বাঁধসমূহ দুই সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের অনুরোধ জানিয়েছি। সিডিএ চেয়ারম্যানও তার প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করে বাঁধ অপসারণের আশ^াস দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জল কান্তি পাল পূর্বকোণকে জানান, আগামী ২০ মে চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টিপাত পারে। তবে তিনি চলতি মাসের বাকিদিনগুলোর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার খবর জানাতে পারেননি। এদিকে, আবহাওয়ার ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এবং আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেও চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর যেসব খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে, সব খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেয়া হয়েছে। কোথাও পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। চশমা খালের ষোলশহর আবাসিক এলাকা, টিএন্ডটি কলোনি সম্মুখ ব্রিজ এবং ২ নম্বর গেট মোড় হতে শুলকবহর মুখ, মেহমান ক্লাব পর্যন্ত কিছু দূর অন্তর পানির প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। চশমা খালের ব্রিজ নির্মাণের জন্য আনা লোহার সিট পাইল ফেঅপরিকল্লেপিত ব্রিজ নির্মাণের অংশে পুরো খালের পানি চলাচল প্রতিবন্ধকতা করে রাখা হয়েছে। চাক্তাই খালে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের সম্মুখ হতে বারৈপাড়া ব্রিজ হয়ে চকবাজারস্থ ঘাসিয়া পাড়ার ফুলতলা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার খালে মাটি ভরাট করে সংকীর্ণ পথ দিয়ে পানি চলাচল করছে। আর সেই পানি চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বাঁধ দিয়ে সারি সারি প্রি-কাস্ট পাইল রাখার কারণে। এতে পুরো খালের পানি সরু ওই অংশ দিয়ে চলাচলে মারাত্মক বাঁধা সৃষ্টি হয়ে খালসংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘক্ষণ পানি জমে থাকছে। কিছু নালার উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে শেষ হলেও কিছু কিছু অংশে রয়ে গেছে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সেন্টারিংয়ের বাঁশ, কাঠ, বালুর বস্তা।

ঘাসিয়াপাড়া মহল্লা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ নাসের বলেন, প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা, বাঁধ না কাটাসহ নানা কারণে খাল এখন পানি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের যে কাজ করছে তা অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। কাজ করতে গিয়ে খালটি অত্যন্ত সরু হয়ে গেছে। পানি চলাচল করতে পারছে না। এমনকি মেয়রের বাড়িতেও পানি জমেছে। চাক্তাই খালের মুখে যে স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে খালের মুখ পুরো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন কাজ চলছে সেজন্য আমরা দুর্ভোগ মেনে নিতে রাজি আছি। তাই বলে অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করে মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলার কোন অর্থ হয় না। ঈদের দিন প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। এই সময়ে দোকানে পানি ঢুকে অনেক দোকানের নিচ তলার মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। তারা একটু সতর্ক হলে ক্ষতি এবং দুর্ভোগ কিছুটা কমতো। অনভিজ্ঞ ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে কারণে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

হালিশহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার একাধিক বাসিন্দার সাথে আলাপকালে তারা জানান, আসন্ন বর্ষা নিয়ে তারা আতঙ্কে আছেন। মহেশখালসহ আশপাশের উপখালসমূহে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজের জন্য খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এসব বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। যে কারণে পানি নামতে দেরি হচ্ছে।

শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম বলেন, বর্ষা অতি সন্নিকটে। যেহেতু বাঁধ অপসারণ করতেও সময় লাগবে। তাই কালক্ষেপণ না করে এখন থেকেই এই বর্ষার আগে বাঁধগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। না হয় নগরবাসীকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে খালগুলোর বাঁধ খুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, সবগুলো আসলে পুরোপুরি বাঁধ নয়। কিছু কিছু জায়গায় খালে পানি যাওয়ার জন্য পাইপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পানি েেবশি হলে পাইপ দিয়ে যেতে পারে না। স্বাভাবিক সময়ে পানি যাতায়াতের জন্য এই পাইপ যথেষ্ট কিন্তু বৃষ্টি হলে পানি যেতে সময় লাগে। সম্প্রতি সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটাকে আসলে জলাবদ্ধতা বলা যাবে না, এখানে পানি যেতে একটু বেশি সময় লেগেছে, এই আর কি। যেহেতু খালের কাজ এখনো চলমান রয়েছে, তাই এখনই খালের বাঁধ খুলে দেয়া যাবে না। খালে আরো একমাসের মত কাজ চলবে, কাজ শেষ হলে বাঁধ কেটে দেয়া হবে। বর্ষার আগেই খালের বাঁধ কেটে দেয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, তবে এর আগে যদি বেশি বৃষ্টি হয়, প্রয়োজনে বাঁধ কেটে দেয়া হবে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৫১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট