চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দ্বিতীয় ডোজের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন

টিকা পাবে না লক্ষাধিক মানুষ!

ইমাম হোসাইন রাজু 

১০ মে, ২০২১ | ১:৪৩ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে ফুরিয়ে এসেছে করোনা প্রতিরোধের টিকা। যার কারণে দ্বিতীয় ডোজ টিকা না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন লক্ষাধিক মানুষ। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা মজুদ রয়েছে, তা দৈনিক চাহিদা হিসেবে চলবে মাত্র চার কিংবা পাঁচ দিন। তবে কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতির হিসেবে এ সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাবে মজুদকৃত এসব টিকা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মজুদ ছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন না। সংকটের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন, ৭০ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন। বাদ যাবেন মাত্র ৩০ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের এ হিসেবে ৭০ হাজার মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাচ্ছেন না। যদিও কর্তৃপক্ষ আশাবাদ, চলতি মাসের শেষ বা জুন মাসের শুরুতে নতুন করে একই ধরণের টিকা পাওয়া গেলে, সংকট নিরসন হবে। তবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধের টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ২৭৪ জন। যাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৬ জন। এরমধ্যে গতকাল রবিবার পর্যন্ত নগরীরসহ উপজেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩০১ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকার পেতে অপেক্ষামান আছেন ১  লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৯ জন।

তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে গতকাল রবিবার পর্যন্ত টিকা মজুদ ছিল ২ হাজার ৭১৭ ভায়াল। যা ২৭ হাজার ১৭০ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া যাবে। সেই হিসেবে অপেক্ষামান ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৯ জনের মধ্যে টিকা পাবেন মাত্র ২৭ হাজার ১৭০ জন। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ২৮৯ জনই দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবে না। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, ৩০ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে দ্বিতীয় ডোজের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা থেকে বাদ পড়বেন ৭০ হাজার মানুষ।

প্রসঙ্গতঃ দেশে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে। যা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সেরামের টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশে টিকা পাওয়া অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও। ইতোমধ্যে সংকট পড়েছে টিকার।

টিকা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ডোজসহ সাধারণ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ভাবতে শুরু করেছে সরকার। উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরাও কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসের শেষ কিংবা জুন মাসে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দেশে নতুন করে টিকা আসবে। চীন-রাশিয়া ছাড়াও আমেরিকান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনারও পরিকল্পনা চলছে। ঈদের পরই এ সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন খবরও পাওয়া যাবে বলে জানান তাঁরা।

সংকটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা মজুদ রয়েছে, তা ঈদ পর্যন্ত চলবে। যদিও ঈদের পর এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসবে। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার (৩০ মার্চ পর্যন্ত) মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া যাবে না।’

‘যারা টিকা না পাওয়ার তালিকায় পড়বে, তাদের আশঙ্কার কিছুই নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ দেয়ার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারে। তাই এ নিয়ে কোন আশঙ্কায় থাকার প্রয়োজন নেই। চলতি মাসের শেষ দিকেই নতুন করে টিকা আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে বলে আশাবাদ এ কর্মকর্তার।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরও সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সব জায়গাতেই টিকার সংকট রয়েছে। তবে টিকা নিশ্চিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা ভাবছেন। মাসের শেষ কিংবা আগামী মাসের শুরুতেই একই টিকা (অ্যাস্ট্রাজেনকার) পাওয়া যাবে। ভারত থেকে না হলেও অন্য রাস্ট্র থেকে আনা হবে। আশা করছি ঈদের পরপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে প্রথম ডোজের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয় এর আট সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল থেকে। টিকার সংকট দেখা দেয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট