চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আ. লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় মোশাররফ

সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন লোককে দলে টানতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুন, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন। এখানে সাংগঠনিক শক্তি অনেক বেশি। তিনি যখন জেলার দায়িত্বে ছিলেন তখন অনেক বিপদ মাথায় নিয়ে সংগঠন করেছেন উল্লেখ করে বলেন, সাত থানার প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি গিয়ে সংগঠন করেছেন। এখনো সেই সাংগঠনিক শক্তি উত্তর জেলায় আছে। বর্তমান নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হলে যাদের সাংগঠনিক শক্তি আছে পছন্দ না হলেও তাদের কাছে টানবেন। সবসময় নিজের কাছের লোক, যারা কথা শুনবেন তাদের রাখবেন না। যদি সাংগঠনিক দক্ষতা না থাকা সত্বেও আপন লোকদের রাখেন তাহলে সংগঠন শক্তিশালী হবে না। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি’র সভাপতিত্বে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ বক্তা ছিলেন সংগঠনের সা. সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম.এ সালাম।
প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ প্রয়াত জননেতা এম এ আজিজ এবং জহুর আমদ চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতাদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, এম এ আজিজ বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের লোক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিতেন। তিনি থাকলে জাসদ সৃষ্টি হত না। বড় নেতাদের মধ্যে হয়তো দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু একে অপরের প্রতি আন্তরিক ছিল। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালিদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সেজন্য তিনি ৬ দফা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচেছ। আওয়ামী লীগই এই দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটের মধ্যে অনৈক্য প্রকাশ করার জন্যে এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল অলি আহমদকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এখন তিনি কোথায় আছেন তা প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি কি নিজে ঘোষিত জোটের নেতা হিসেবে আছেন, নাকি বিশ দলীয় জোটের নেতা হিসেবে আছেন। নাকি ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে আছেন। রাজনীতির মাঠে এটা একটি বড় প্রশ্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে যেমন ঐক্য নেই তেমনি বিশ দলীয় জোটের মধ্যেও ঐক্য নেই। তাদের মধ্যে যে ঐক্য নেই তার বহি:প্রকাশ হচ্ছে কর্নেল অলি আহমদের আলাদা জোট গঠন করা। কর্নেল অলিকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আশাকরি তিনি তার পরিচয় জনগণের সামনে তুলে ধরবেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদদের কেনা-বেচার হাট বসিয়ে বিএনপি গঠন করেছেন। সেই হাটে যারা বিক্রিত হয়েছিলেন তাদের মাঝে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়েছেন। সেই কারণে দেখতে পাচ্ছি বিএনপি অফিসে ১০ই জুন থেকে বিক্ষোভ চলছে। ১৮ দিনের বেশি সময় ধরে নিজেদের অফিস যেখানে সাধারণ কর্মীরা অবরূদ্ধ করে রেখেছেন, তারা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করবেন। যারা নিজেদের কর্মীদের তুষ্ট করতে পারেননা, শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে পারেননা তারা দেশের মানুষকে কীভাবে খুশি রাখবেন এবং দেশ কীভাবে পরিচালনা করবেন!
আ. লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেখানে রাজনীতির জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা জীবন দিয়েছেন সেখানে আজকে আমরা সামান্য স্বার্থ ত্যাগ করতে পারিনা। দলের মধ্যে লেখাপড়া ও আদর্শের চর্চা করার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দলের ইতিহাস দেশের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমাদের সাথে বিএনপির পার্থক্য সেখানেই। আমরা দলের সাধারণ সমর্থক ও কর্মীরা মনে করি আমাদের প্রথম পরিচয় বাঙালি। তারপর দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে মুসলমান, হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। আর যারা বিএনপি করেন তাদের প্রথম পরিচয় মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ। দ্বিতীয় পরিচয় তারা বাংলাদেশি নাকি বাঙালি তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন। এটাই হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের মূল পার্থক্য। তিনি বলেন, একবার বঙ্গবন্ধুকে আদালতে হাজিরার জন্য আনা হলে ছোটভাই শেখ কামালকে নিয়ে দেখতে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখনো শেখ কামাল জানতেননা বঙ্গবন্ধু তার বাবা। শেখ হাসিনা তাকে বাবা বলে ডাকছিলেন তখন শেখ কামাল বলেছিলেন হাসু আপু আমি কি তোমার বাবাকে বাবা ডাকতে পারি ? এই ছিল বঙ্গবন্ধুর সংসার।
আওয়ামী লীগকে একবিংশ শতাব্দীর একটি দল হিসেবে গড়তে চায় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যদি থাকতে চায় জনগণকে খুশি রাখতে হবে। তাদের খুশি রাখতে হলে আমাদের বিনয়ী হতে হবে। জনগণ আমাদের ভোট না দিলে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়।
সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীন শাহ’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. মঈনুদ্দিন, এডভোকটে ফখরুদ্দিন চৌধুরী, কাজী আব্দুল ওহাব, যুগ্ম সা. সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ, সাবেক যুগ্ম সা. সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. জসিম উদ্দিন, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, পৌর মেয়র দেবাশিষ পালিত, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাসেম চিশতি, মোহাম্মদ আলী শাহ, মহিউদ্দিন বাবলু, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, ইদ্রিস আজগর চেয়ারম্যান, এডভোকেট এমএ নাসের চৌধুরী, মহিউদ্দিন রাশেদ, আবুল বশর, নুরুল হুদা, মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, ইফতেখার হোসেন বাবুল, জাফর আহমেদ, এস.এম শফিউল আজম, মো. শওকত আলম, ডা. মোস্তাফা, কাজী মো. ইকবাল, নজরুল ইসলাম তালুকদার, মো. শাহজাহান, শেখ আতাউর রহমান, আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া, মো. আলী খসরু, নাজিম উদ্দিন মুহরী, জেলা কৃষকলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মো. সেলিম উদ্দিন, দিলোয়ারা ইউসুপ, এস.এম রাশেদুল আলম, এডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, শেখ ফরিদ চৌধুরী, রওশন আরা রত্না, বখতেয়ার সাইদ ইরান, তানভির হোসেন তপু, মো. রেজাউল করিম প্রমুখ। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ইফতেখার হোসেন বাবুল সম্প্রতি সামাজিক কাজের অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ‘লিডিং বাই এক্সাম্পল’ এওয়ার্ড লাভ করায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে তাকে সম্মাননা জানানো হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট