চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

খাসি মুরগি আর পোলাওয়ে আপ্যায়িত হবেন কারাবন্দীরা

নাজিম মুহাম্মদ 

১০ মে, ২০২১ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

সাড়ে ছয় হাজারের বেশি বন্দী এবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ঈদ উদযাপন করবেন। করোনা মহামারীতে একমাসের বেশি সময় ধরে স্বজনের সাথে দেখা নেই কারাবন্দীদের। ঈদেও দেখা হবে না স্বজনদের সাথে। তবে বন্দীদের জন্য উন্নতমানের খাবারের আয়োজন  করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবন্দী মায়েদের সাথে থাকা শিশুদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে নতুন জামা।

ঈদকে কেন্দ্র করে বিগত সময়ে কারাগারে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও এবার কিন্তু তা নেই। গত বছরও সাদামাটা ঈদ উদযাপন করেছে বন্দীরা। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে করোনার কারণে গত একমাস ধরে স্বজনদের সাথে বন্দীদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদের দিনও তাই স্বজনেরা দেখা করতে পারবেন না বন্দীদের সাথে। করোনায় বন্দীদের নিরাপদ রাখতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে কোন বন্দী চাইলে কারাগারে থাকা সরকারি ফোনে স্বজনের সাথে কথা বলতে পারেন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান জানান, করোনা প্রকোপ থেকে বন্দীদের নিরাপদ রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কারাগারে। তারপরও আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সাক্ষাৎ কক্ষে দর্শণার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, বিধায় আপদকালীন সময়ে আপাতত সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। কারাগারের ২৪টি ওয়ার্ডকে কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন বন্দীদের হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজ করার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ডে রেখে তারপর সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে।

জেল সুপার জানান, অন্য সময়ে ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন বন্দীদের জন্য বাড়িতে রান্না করা খাবার নিয়ে আসার সুযোগ পেতেন স্বজনেরা। করোনার কারণে গত বছর থেকে এ সুযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পরিবর্তে কারাগারে উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানান, গতকাল রবিবার কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৮৬২ জন। ঈদের দিন কারা অভ্যন্তরে বন্দীরা ঈদের নামাজ পড়বেন। নামাজের পর ঈদের দিন সকালে প্রত্যেক বন্দীকে সেমাই, মুড়ি দেয়া হবে। দেশের অন্যান্য কারাগারে গুঁড় আর মুড়ি দেয়া হলেও চট্টগ্রাম কারাগারের বন্দীরা সেমাই, মুড়ি পছন্দ করেন। বন্দীদের পছন্দের কথা চিন্তা করে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুরে বন্দীদের পোলাও, খাসি, মুরগি, কোমল পানীয়, পান-সুপারি ও শসার সালাদ দেয়া হবে। রাতের বেলায় বন্দীদের সাদা ভাত, রুই মাছ, ডিম, আলুর দম অথবা দই আর কোমল পানীয় দেয়া হবে।

বন্দী মায়ের সাথে ঈদ করবে ৬৫ শিশু :  কোন অপরাধ না করেও কারাগারে বন্দী রয়েছে ৬৫ শিশু। এদের মধ্যে ৩৭ জন ছেলে ও ২৮ জন মেয়ে। নানা অপরাধে জড়িত কারাবন্দী মায়ের সাথে শিশুরাও বন্দী জীবন যাপন করছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জানান, বন্দী মায়ের সাথে শিশুদের ছয় বছর বয়স পর্যন্ত কারাগারে রাখা হয়। কারাগারে থাকা শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও পড়াশুনার ব্যবস্থা রয়েছে। ছয় বছর বয়স পার হলেও তাদেরকে সমাজ সেবার আওতাধীন বিভিন্ন শিশু সদনে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা ৬৫ জন শিশুকে ঈদে নতুন জামা কাপড় দেয়া হবে জেলা প্রসাশকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি শিশুর জামার মাপ নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, কারাবন্দী মায়ের সাথে থাকা সকল শিশুকে নতুন জামা দেয়া হবে।  বড়দের জন্য শাড়ি কেনা হয়েছে। ঈদের আগের দিন এসব জামা-কাপড় বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, কারাবন্দী শিশু ছাড়াও এবারের ঈদে সকল এতিম খানার শিশুদেরকেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন জামা দেয়া হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট