চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চেম্বারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম

জাতীয় স্বার্থে প্রকল্প নিন টাকা সমস্যা হবে না

‘সীতাকু- ও মিরসরাইয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুন, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

‘অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তান আমল থেকে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। তাই বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং আরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ন্যূনতম ৫০ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আপনারা প্রকল্প তৈরি করতে পারলে টাকা কোন সমস্যা হবে না। জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র কোন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কথা ভেবে প্রকল্প গ্রহণ করবেন না। এক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে দায়বদ্ধভাবে চট্টগ্রামবাসীকে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।’ গতকাল শুক্রবার সকালে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থ’ানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে ‘সীতাকু- শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী আগ্রাবাদস্থ ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী নদীতে পলিথিনের কারণে ড্রেজিং করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে বন্দর অচল হয়ে পড়বে। আর চট্টগ্রাম জেলার সীতাকু- শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কয়েক হাজার কোটি টাকার সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। উন্নত

দেশ হওয়ার জন্য মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের মাধ্যমে যাতায়াতের সময় এক থেকে দেড় ঘণ্টায় নামিয়ে আনা, ব্লু-ইকনোমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সর্বক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের আহবান জানান মন্ত্রী। সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সড়ক তৈরি হওয়ার পর ওয়াসা, গ্যাস, বিদ্যৎ এর লাইনের জন্য সড়ক কাটা হচ্ছে। রাস্তা কাটাকে আপনারা আটকাতে পারবেন না। মানুষের কাছে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এসব আপনাদের মাথায় আগে কেন আসে না। সব সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
সমন্বয়ের প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন-চট্টগ্রাম মহানগরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ২৪টি সেবা সংস্থা রয়েছে। আমরা অনেক সময় সমন্বয়ের কথা বলি। কিন্তু আইনি জটিলতা থাকায় সমন্বয় করা সম্ভব হয় না। তবে পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বেই সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুবুল আলম বলেন- সারা দেশের জন্য এক নিয়ম আর চট্টগ্রামের জন্য অন্য নিয়ম হতে পারে না। অন্য জেলায় ১৫ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারবে আর চট্টগ্রামে ১৩ টনের বেশি পণ্য আনা যাবে না। এটা তো নিয়ম হতে পারে না। ১৩ টনের দুঃখ থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা মুক্তি চায়।
তিনি আরো বলেন, সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চলে প্রায় ৪০০ শিল্পে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জাতীয় কোষাগারে জমা হয়। কিন্তু ঐ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকা এবং পানির স্তর অনেক গভীরে নেমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এসব শিল্প কারখানা অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে এবং নতুন করে কোন শিল্প স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। তাই মিরসরাই শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানান।
মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ১৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তিনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে পানি পুনরায় শোধনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ ইকনোমিক জোন অথরিটি’র (বেজা) সদস্য মো. হারুনুর রশিদ, ওয়াসার এমডি ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী, চেম্বার পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল) ও মো. শাহরিয়ার জাহান, নবনির্বাচিত পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব, মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, ইউরো পেট্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড এর চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, জিপিএইচ ইস্পাত’র অতিরিক্ত এমডি আলমাস শিমুল ও বিএসআরএম’র ডিএমডি তপন সেন গুপ্ত।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), মো. জহুরুল আলম, ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সরওয়ার হাসান জামিল, মুজিবুর রহমান, মো. আবদুল মান্নান সোহেল, নবনির্বাচিত পরিচালক বেনজির চৌধুরী নিশান ও নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর. ড. ইঞ্জিনিয়ার এস এম নজরুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, জিপিএইচ ইস্পাত’র এমডি জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট