চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

অতিরিক্ত যাত্রী তোলার প্রতিবাদের মাশুল

সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ৪ যাত্রীকে পিটিয়ে নদীতে ফেলে হত্যার চেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা , সন্দ্বীপ

২৯ জুন, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

কুমিরা গুপ্তছড়া নৌরুটে লালবোটে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না উঠায় ৪ যাত্রীকে পিটিয়ে নদীতে ফেলে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে বলে লালবোটের চালক ও স্টাফদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বৃহষ্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কুমিরা গুপ্তছড়া ফেরী ঘাটের গুপ্তছড়া অংশে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সন্দ্বীপ থানায় একটি লিখত অভিযোগ দায়ের করেছে।তবে অভিযোগের ২৪ ঘন্টা পরেও কোন আইনী তৎপরতা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা। হামলার শিকার হওয়া ৪ যাত্রী হলেন মো. মানিক, মো. সোহেল, মো. শিবলু ও মো. শিহাদ। তারা সবাই মুছাপুরের আলীমিয়ার বাজার এলাকার মান্দিরগো বাড়ির বাসিন্দা এবং সম্পর্কে আত্মীয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানাযায়, কুমিরা ঘাট থেকে সার্ভিস বোটে চড়ে সন্দ্বীপ আসছিল ভুক্তভোগীদের পরিবার। বোট সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটে কূল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নোঙ্গর করে একটি লালবোটের মাধ্যমে সার্ভিস বোট থেকে যাত্রীদের কূলে নিচ্ছিল। লালবোটটিতে ৫০ থেকে ৬০ যাত্রী হওয়ার পরেও বোটের মাঝি ও স্টাফরা সার্ভিস বোট থেকে সোহেলদের ঐ বোটে নামতে ডাকাডাকি করে।সোহেল সেই বোটে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নামতে রাজি হয়নি। এই নিয়ে সোহেলের সাথে বোটের চালক ও স্টাফদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে একজন স্টাফ সোহেলকে ধাক্কাধাক্কি নামিয়ে নেয় এবং অন্য স্টাফ ও মাঝিসহ তার গায়ে হাত উঠায়। সার্ভিস বোট থেকে সোহেলকে বাচাতে তার দুইজন আত্মীয় ও অন্য যাত্রীরা নামতে চাইলে মাঝি সার্ভিস বোট থেকে লালবোট সরিয়ে নিয়ে তাদের বেধড়ক মারধর করে পরে সোহেল ও শিবলুকে নদীতে ফেলে দেয়। পরে কূলে তুলে নিয়ে আবারো মারধর করে একপর্যায়ে লাথি মেরে আবারো পানিতে ফেলে দেয়। সোহেল ও শিবলু কয়েকদিন আগে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাদের আনতে নিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম কুমিরা ঘাট থেকে সার্ভিস বোটে করে সন্দ্বীপ আসছিল। তাদের ছোট ভাই শিহাদ, পিতা

মানিক, মা, সোহেলের স্ত্রী -সন্তান ও বাচ্চারা ছিল। আহত সোহেল ও শিবলুকে বাড়িতে আনার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরাফাত রহমান সাব্বির জানান, হঠাৎ করেই দেখি ঘাটের লোকজন মিলে লালবোটে ফেলে একজনকে মারছে। ঐ লোককে বাঁচাতে ২/৩ জন সার্ভিস বোট থেকে লাফিয়ে লাল বোটে নামে । সাথে সাথে তারা লালবোটটা সার্ভিস বোটের কাছ থেকে সড়িয়ে নেয়। কিছুদূর নিয়ে গিয়ে নৌকা থামিয়ে নদীর মাঝখানে তাদের আবার পেটানো হয়। পরে কূলে নিয়ে লাথি মেরে বোট থেকে ফেলে দেয়। সবচেয়ে লেগেছে ঐ মানুষটা একজন প্রবাসী। তার স্ত্রী, ছোট একটা মেয়ে আর মা বোন ঐ সময় ঐ সার্ভিস বোটে ছিল।
হামলার শিকার সোহেল জানান, একটি লালবোটে ৬০ জনের বেশী যাত্রী নেওয়ায় আমি উঠতে রাজি হইনি। এজন্য ওরা (লালবোটের স্টাফ) আমাকে ও আমার ভাইদের মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রীদের প্রতি অত্যাচার করার কথা শুনেছিলাম। গতকাল তারা আমাদের মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এই ঘটনায় কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ভারত অবস্থান করায় তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অভিযুক্ত চারজনকে চাকরি থেকে অব্যহিত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘাট পরিচালনা সংশ্নিষ্ট আজিজুর রহমান নামে একজন নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সন্দ্বীপ থানার ওসি শেখ মো.শরিফুল আলম বলেন, গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রীদের উপর হামলার একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে আইনী ব্যাবস্থা নেব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট