চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভারতীয় ‘নিম্নমানের’ চাল আমদানি, খালাস বন্ধ

মুহাম্মদ  নাজিম উদ্দিন 

৯ মে, ২০২১ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

ভারত থেকে আমদানি করা চালের মান খারাপ হওয়ায় জাহাজ থেকে খালাস বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। ওই জাহাজে প্রায় ১৯ হাজার টন চাল ছিল। এসব চালের মধ্যে কিছু কিছু বস্তায় অতিরিক্ত ভাঙা চাল থাকায় খালাস বন্ধ করা হয়েছে।  গতকাল সন্ধ্যায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চাল খালাস বন্ধ করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মো. শফিউল আজম পূর্বকোণকে বলেন, জাহাজের প্রথম স্তরের চাল খালাসের পর পরের স্তরের চালের মান খারাপ পাওয়া যায়।

কিছু কিছু বস্তার চাল ছিল অত্যধিক ভাঙা। ক্ষুদের মতো। তা খাবার অনুপযোগী। মান খারাপ থাকায় আমরা আপাতত চাল খালাস বন্ধ করে দিয়েছি। তবে বেশির ভাগ বস্তায় ভালো চাল ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খাদ্য অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেইভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ৪ মে ভারত থেকে চালবাহী ড্রাগন নামে জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। বন্দর ও কাস্টমস কার্যক্রম শেষ করে ৭ মে বন্দর জেটিতে ভিড়ে। এরপর খালাস শুরু হওয়ার পর নিম্নমানের চাল ধরা পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য বিভাগের সমুদ্র বন্দর চলাচল ও সংরক্ষণ দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত থেকে আমরা ত্রাণ নিচ্ছি না। চাল কিনে নিচ্ছি। তাই খারাপ ও নিম্নমানের চাল গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সরকারি নির্দেশনা মেনে শতভাগ ভালো চাল গ্রহণ করা হবে।’

দেশে চাল সংকটের কারণে সরকার ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে ৭ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। জিটুজি ও আন্তর্জাতিক টেন্ডারে আমদানি করা হচ্ছে এসব চাল। চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের কয়েকটি স্থল ও সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকছে এসব চাল। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় দুই লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। ২ লাখ টনের বেশি চাল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে খালাস হয়েছে।

গত কয়েক দিন আগে ১৯ হাজার একশ টন চাল নিয়ে বন্দরে পৌঁছে একটি জাহাজ। খাদ্য বিভাগের সদরঘাটের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা খালাসের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে জাহাজের উপরের স্তরের চাল খালাস করা হয়। পরের স্তরের চাল খালাসের সময় দেখা যায়, অধিকাংশ বস্তার চাল ছিল ভাঙা। কিছু কিছু বস্তায় ছিল অত্যাধিক ভাঙা। বিষয়টি জানাজানির পর খাদ্য বিভাগের আঞ্চলিক ও জেলা কর্মকর্তা এবং আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে। সাথে ছিল খাদ্য বিভাগের ল্যাবরেটরির কর্মকর্তারাও। কিছু কিছু বস্তায় অত্যাধিক ভাঙা থাকায় সকলের সমন্বয়ে জাহাজের চাল খালাস বন্ধ করে দেয় খাদ্য অধিদপ্তর।

খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বকোণকে বলেন, ‘জাহাজের উপরের স্তরের চালগুলো ভালো ছিল। আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকারি নির্দেশনা মতো মান ভালো থাকায় খালাসের অনুমতি দিয়েছে। তবে পরের স্তরের বেশির ভাগ চালের বস্তায় অত্যাধিক ভাঙা চাল ছিল। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সরেজমিন তা পরীক্ষা করা হয়। এরপর খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

খাদ্য বিভাগ জানায়, আমদানি করা চালের মান নিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। চাল খালাসের সময় ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকেন। তারা চালের বস্তা যাচাই-বাছাই করে দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিপুল সংখ্যক বস্তা যাচাই-বাছাই করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানায় খাদ্য বিভাগ।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট