চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জলাবদ্ধতার শঙ্কায় কর্তৃপক্ষের ‘না’

ইমরান বিন ছবুর 

৯ মে, ২০২১ | ১২:১৭ অপরাহ্ণ

ফি বছরের ন্যায় এবারের বর্ষায়ও নগরী জলাবদ্ধতায় ডুববে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ডুবে যায়। বিশেষ করে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থাকে পুরো বর্ষাজুড়ে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প ও কাজের কথা শোনা গেলেও সেসব কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় নগরবাসীর মধ্যে এখনও শঙ্কা ভর করে আছে বর্ষার জলাবদ্ধতা নিয়ে।

তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় নগরীতে এবছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী। তিনি বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৩৬টি খালের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজাখালী-২ ও কলাবাগিচা খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ চলমান রয়েছে।

আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চলতি বছরে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ১২ থেকে ১৪ খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ সমাপ্ত করবো। এছাড়া, আগামী শুষ্ক মৌসুমে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ করে ফেলবো। তবে যেসব জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ বাকি রয়েছে, সেসব জায়গা ছাড়া বাকি জায়গাগুলোতে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ সমাপ্ত করতে পারবো। ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য আমরা সিডিএকে বারবার বলছি। সিডিএ আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা কিছু ভূমি আমাদের অধিগ্রহণ করে দিবে। সিডিএ নিজেরাও কিছু ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তাদের সে সক্ষমতা রয়েছে।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় জলাবদ্ধতা কমবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, খাল ছাড়াও নগরীতে কিছু ড্রেন রয়েছে, যেগুলোর কাজ সম্পন্ন করা গেলে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমে আসবে। আমরা সেসব ড্রেনের কাজ সম্পন্ন করেছি। প্রাথমিকভাবে ৫২ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শেষ করা হয়েছে। এসব ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নির্মূল হবে না। এছাড়াও আরো কিছু ড্রেনের কাজ করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে আমরা এসব ড্রেনের কাজ করবো।

নগরীতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সমাধানে স্লুইস গেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্লুইস গেটের কাজ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গেটগুলো কম্পোজিট মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি। এগুলো নেদারল্যান্ড থেকে আনা হবে। আমরা চেয়েছিলাম গেটগুলো জুনের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু করোনা ও অন্যান্য কারণে আমরা গেটগুলো এখনো আনতে পারিনি। কলাবাগিচা, ফিরিঙ্গীবাজার, টেকপাড়া, মরিয়মবিবি ও মহেশখালী খালে পাঁচটি খালে স্লুইস গেট বসানো হবে। এসব স্লুইস গেটের ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে গেটগুলো না আসা পর্যন্ত আমরা স্লুইস গেট ওপেন করবো না। বর্তমানে এই স্লুইস গেট দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে না, তবে পাইপের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিগত বছরের তুলনায় জলাবদ্ধতা কমে আসবে উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, জলাবদ্ধতা আমরা আশা করছি, এবছর বর্ষা মৌসুমে গত বছরের তুলনায় জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম হবে। পানি খালে যাওয়ার জন্য যে ড্রেনের প্রয়োজন সেটা আমরা করেছি। যে ড্রেনগুলো সিটি কর্পোরেশনের পরিষ্কার করার কথা সেগুলো যদি তারা ঠিকভাবে পরিষ্কার না করে তাহলে তো পানি যেতে পারবে না। এ কারণে সিটি কর্পোরেশনের কারণে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের দুর্নাম হতে পারে। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর ড্রেন দিয়ে তো জলাবদ্ধতা দূর হবে না। বাকি ড্রেনগুলোও ঠিক থাকতে হবে।

অন্যদিকে, এ পর্যন্ত ৩৫টি খাল থেকে ৩ হাজার ১৩৫ স্থাপনার অবৈধ অংশের একাংশ গুড়িয়ে দিয়েছে সিডিএ। বাকি অংশটুকু অপসারণের জন্য নির্ধারিত সময় বেধে দেয় ভবন মালিকদের। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা ছিল গয়নাছড়া খালে। সেখানে ৩৯১টি অবৈধ স্থাপনা ছিল। যারমধ্যে ১৮টি বহুতল ভবন ছিল। বিএস এবং আর এস মূলে একটি ৩৬টি খালের মধ্যে পাখিজা নামের একটি খালের অস্তিত্ব পায়নি সিডিএ ও সেনাবাহিনী। এর পরিবর্তে নতুন একটি খাল প্রকল্পে যুক্ত করা হবে বলে জানান সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং চলতি বছরের ২ জুলাই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট