চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘ধ্বংসের মুখে পর্যটন খাত, প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ মে, ২০২১ | ৯:৩৩ অপরাহ্ণ

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তে বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে বিনোদন খাত। শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, গণপরিবহন সরকারি সিদ্ধান্তে খোলা থাকলেও পর্যটনকেন্দ্রসমূহ বন্ধ থাকায় এ খাতের সকল ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে দ্রুত খুলে দেয়া না হলে পর্যটনকেন্দ্রসমূহের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

শনিবার (৮ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্কস এন্ড এট্রাকশনসের (বাপা) মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর এম মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। করোনার শুরু থেকেই অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসায়িক খাত বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন খাতে দেয়া হয়েছে সরকারি প্রণোদনা। করোনার তীব্র সংক্রমণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অবহেলিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিনোদন ও পর্যটন খাত। গত বছরের শেষ দিকে প্রকোপ কিছুটা কমলে ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে অনেক বিনোদন ও পর্যটন শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, করোনার ২য় ধাপে আবারো বিনোদন পার্ক ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবসায়িক মৌসুম হল ঈদ। এই সময়ে প্রচুর পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রসমূহ। অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, গণপরিবহন সরকারি সিদ্ধান্তে খোলা থাকলেও এই খাতটির সকল ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে আছে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে। অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এখন যদি বিনোদন কেন্দ্রসমূহ খুলে না দেয়া হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

মাহফুজুর রহমান বলেন, মানুষের জীবন ও জীবিকা একসাথে চালাতে হয়, এটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্কের ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশের কম দর্শনার্থী প্রবেশ ও তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত রেখে কার্যক্রম পরিচালনাসহ পার্কের মূল প্রবেশ দ্বারের বাইরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো, দর্শনার্থী পরীক্ষাপূর্বক টিকেট সংগ্রহ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, ফুড কোর্ট আর রাইডগুলো নিয়মিত স্যানিটাইজ করাসহ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যবিধি এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্ত ব্যবস্থা বাপার পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তা নিশ্চিত করেই পার্ক গুলো পরিচালনা করে আসছিল। ৫০ শতাংশ এর কম দর্শনার্থীর কথা বলা হলেও, বাস্তবে ধারন ক্ষমতার ২০ শতাংশ দর্শনার্থীও এখন আসে না।

তিনি বলেন, সম্প্রতি নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ঘরের চেয়ে বাইরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়। এ বিবেচনায় বিনোদন পার্কগুলো যেহেতু খোলা জায়গায় অবস্থিত সেহেতু এখান থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। ৬ ফিটেরও অধিক দূরত্ব হতে দর্শনার্থীদের সেবা প্রদান করা সম্ভব যা অন্যান্য সেক্টরগুলোতে বজায় রাখা সম্ভব নয়।

বিনোদন ও পর্যটন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ এবং ব্যাংক লোন রয়েছে মন্তব্য করে মাহফুজুর রহমান বলেন, লকডাউনকালীন এ সেক্টর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যে ধ্বস নেমেছে, তাতে শুধু প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বড় একটি অংশের ঋণখেলাপী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সেক্টর বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না এবং অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরিচ্যুত হবে। সেই সাথে এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা দিন দিন দুরহ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, গত বছর লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরসমূহের জন্য সরকার ঘোষিত প্রনোদনা দেয়া হলেও পর্যটন শিল্প তথা বিনোদন পার্কগুলোকে সরকার ঘোষিত প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয় নি।
তাই সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদের কিছু দিন পূর্ব হতে অন্যান্য সেক্টরের মত পার্কগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে আশু সরকারি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

কক্সবাজার, কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত বা পার্বত্য জেলাসমূহের মতো খোলা জায়গায় দর্শনার্থীদের যে ঢল নামে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হলেও বেসরকারীভাবে পরিচালিত বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ, তাদের সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং যা আমরা এ লকডাউনের আগেও গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পার্কগুলো পরিচালনা করেছি। তাই আমরা মনে করি ঐ সকল পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সাথে বেসরকারিভাবে বিনিয়োগ কৃত বিনোদন পার্কগুলোকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করা ঠিক হবে না। এছাড়াও বাংলাদেশে যত ওয়াটারপার্ক আছে সেখানের পানি ক্লোরিন দ্বারা পরিশোধিত, আর ক্লোরিন মিশ্রিত পানি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অন্তরায়

আসন্ন ঈদের আগে অন্যান্য খাতের প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বিনোদন পার্কসমূহ খুলে দেয়ার দাবি জানান সংগঠনটি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার কর্তৃক প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবিও জানান তারা।

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট