চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে বিনামূল্যের ব্যাটারি পেতে ভোগান্তি

মিজানুর রহমান 

৮ মে, ২০২১ | ১২:১০ অপরাহ্ণ

বিদ্যুতের গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে যে প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হচ্ছে, সেই মিটারের ব্যাটারি নিয়ে গ্রাহকরা পড়ছেন বড় ভোগান্তিতে। প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের দুই বছর না যেতেই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ব্যাটারি পরিবর্তন নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘উদাসীনতা’ এই ভোগান্তির কারণ। কোথাও কোথাও বিনামূল্যের এই ব্যাটারি পরিবর্তনে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে এবং বিল বকেয়া ঠেকাতে চীন থেকে প্রি-পেইড মিটার কেনে সরকার। চীনের ‘হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব মিটার সরবরাহ করে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ‘প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন জোন’ এর আওতায় নগরীর আগ্রাবাদ, স্টেডিয়াম, পাহাড়তলী ও খুলশী বিতরণ বিভাগে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়।

পরে কয়েক ধাপে নগরীর পাথরঘাটা, কালুরঘাট, ষোলশহর, বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, হালিশহর, নিউমুরিং, রামপুর বিতরণ বিভাগের অধীনে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। এ সময় আগের পোস্ট পেইড মিটার পরিবর্তন করে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পাশাপাশি নতুন সংযোগের ক্ষেত্রেও প্রি-পেইড মিটার দেওয়া শুরু করে পিডিবি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে এখন প্রায় পৌনে ৫ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করছেন।

তবে চীন থেকে চড়া দামে কেনা এসব প্রি-পেইড মিটারের মেয়াদ কয়েকবছর না হতেই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছ। আর এর সুযোগ নিচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রি-পেইড মিটারের নষ্ট ব্যাটারি বিনামূল্যে পরিবর্তন করে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারা সেটি মানছেন না। গ্রাহকদের কাছ থেকে এলাকাভেদে আদায় করছেন ২ হাজার থেকে ৩০০ টাকা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েও এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বরং ভোগান্তি আরো বাড়ছে।

ব্যাটারি নিয়ে গ্রাহকদের যত অভিযোগ

গত এপ্রিলে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায় জান্নাত কাউসার বেবির বাসায়। ফোন দিয়ে তিনি অভিযোগ করেন বিদ্যুতের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ খুলশীর কার্যালয়ে। ওই কার্যালয়ের একজন কর্মচারী টেক্সটাইল মোড়ে বেবির বাসার প্রি-পেইড মিটার পরীক্ষা করে জানান তার মিটারের ব্যাটারি লো হয়ে গেছে। ব্যাটারি পরিবর্তন ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে না। পরের দিন এসে ওই কর্মচারী ব্যাটারি পরিবর্তন করে দেন। তবে এর জন্য বেবিকে দিতে হয়েছে ২ হাজার টাকা।

বিনামূল্যের ব্যাটারি পরিবর্তনে ২ হাজার টাকা কেনো দিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বেবি পূর্বকোণকে বলেন, ‘টাকা না দিলে তারা ব্যাটারি পরিবর্তন করা যাবে না বলে জানিয়েছে। বিভিন্ন নিয়ম আর জটিলতার কথা বলেছে। আমার বাসায় শিশু আছে। গরমে তারা ফ্যান ছাড়া থাকতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে দিয়েছি।’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগ কেনো করেননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কার কাছে অভিযোগ করবো? টাকার ভাগ তো সবার পকেটে যায়।’

চকবাজারের ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা সাবের খান পূর্বকোণকে বলেন, ব্যাটারি পরিবর্তনে আমার কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করেন বিদ্যুতের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ বাকলিয়া কার্যালয়ের একজন কর্মচারী। আমার ভাই আইনজীবী পরিচয় দেওয়ার পর তিনি ৩শ টাকায় ব্যাটারি পরিবর্তনে রাজি হন। তবে এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮ দিন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগ কেনো করেননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযোগ করলে ঝামেলা করে তারা।

শুধু জান্নাত কাউসার বেবি কিংবা সাবের খান নন, ব্যাটারি পরিবর্তনে ভোগান্তি এবং বিনামূল্যের ব্যাটারি পেতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। সম্প্রতি পূর্বকোণের ফেসবুক পেজে প্রি-পেইড মিটারের ব্যাটারি বিনামূল্যের উল্লেখ করে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি শেয়ারের পর কমেন্ট বক্সে ব্যাটারি পেতে নানা ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন গ্রাহকরা। প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন কেউ কেউ।

ব্যাটারি পরিবর্তনে টাকা নিলে ব্যবস্থা

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু পূর্বকোণকে বলেন, প্রি-পেইড মিটারে ব্যাটারি পরিবর্তনে কোনো টাকা লাগে না। এটা বিনামূল্যে দিচ্ছি আমরা। কোথাও ব্যাটারি পরিবর্তনে বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ টাকা দাবি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনামূল্যের ব্যাটারি পরিবর্তনে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, কোনো গ্রাহকের প্রি-পেইড মিটারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সেখানে প্রতিকার না পেলে আমার কাছেও চলে আসতে পারেন। গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। তবে একসাথে অনেক আবেদন এলে সমাধান দিতে কিছু সময় প্রয়োজন। গ্রাহকদের বিষয়টি বুঝতে হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট