চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রথম দিনেই চিরচেনা রূপে নগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ মে, ২০২১ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার লকডাউনের মধ্যে গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন সরকারি এই নির্দেশনা উপেক্ষিতই ছিলো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। এদিন প্রায় প্রতিটি গণপরিবহনেই সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে গাড়ি ভর্তি যাত্রী নেওয়ার পাশাপাশি আদায় করা হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়াও । করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল থেকে দেওয়া সর্বাত্মক ‘কঠোর লকডাউনে’ ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। বাস, মিনিবাস, অটো টেম্পো, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশাসহ সবধরনের গণপরিবহন সড়কে নামে। তবে এসব গণপরিবহনে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো মানা হয়নি।

বেশি ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা

নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে ৩ নম্বর রোডের বাসে মুরাদপুর আসেন আরাফাত হোসেন। নেমে ভাড়া দেওয়ার সময়ই বাসের হেল্পারের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাকবিত-ায় জড়ান তিনি। জানতে চাইলে আরাফাত পূর্বকোণকে বলেন, ‘অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর ৫ টাকা ভাড়া। ৬০ শতাংশ বেশি হলে ৮ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু হেল্পার কোনোভাবেই তা মানছেন না। ১০ টাকা ভাড়া চাইছেন।’ তিনি বলেন, ‘সরকার ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিতে বলেছে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার জন্য। যাতে মিনিমাম সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে। অথচ গণপরিবহন শ্রমিকরা বাসভর্তি করে সরকার যা বলেছে তার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে এখন ভাড়াও দ্বিগুণ নিচ্ছেন। কোনো যুক্তি দিয়ে তাদের বিষয়টি বুঝানো যাচ্ছে না। কিছু বলতে চাইলেই দুর্ব্যবহার করছেন তারা।’

আরাফাতের অভিযোগের মতো একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে নগরীর দুই নম্বর গেট, চকবাজার, জিইসি মোড়, লালখান বাজার, টাইগার পাস, দেওয়ানহাট মোড়, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, আগ্রাবাদসহ গণপরিবহন চলাচলের বিভিন্ন রুটে। বৃহস্পতিবার এসব রুটের গণপরিবহনে দ্বিগুণ যাত্রী নেওয়ার পাশাপাশি ভাড়াও দ্বিগুণ আদায় করা হয়। বেশি ভাড়া নিয়ে হেল্পারের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়ান যাত্রীরা।

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও

গত বুধবার গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে গণপরিবহন চলাচলে বেশকিছু নির্দেশনা দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে যথাযথ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, গাড়িতে জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং নির্ধারিত রুটে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা ছিলো পুলিশের।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব নির্দেশনা না মেনেই গণপরিবহন চলাচল করেছে সড়কে। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় গণপরিবহনে যেমন সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি, তেমনি চালক ও যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। গাড়িতে উঠার সময় যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়নি। প্রতিটি ট্রিপের পর গণপরিবহনগুলো জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করেনি। ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করেছেন মানুষ।

দুপুরে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় কথা হয় ১০ নম্বর রোডের একটি বাসের হেল্পার তমজিদ মিয়ার সঙ্গে। মুখে মাস্ক ছাড়াই চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভাই বেশি গরম। মাস্ক মুখে থাকলে নিশ্বাস নিতে পারি না। তাই পকেটে রাখি। পুলিশ এলে পরি।’ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে তার উত্তর- ‘সবতো নিজের চোখেই দেখছেন। আমি আর কি বলবো।’

গণপরিবহনের সঙ্গে ফিরেছে যানজট

সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে সবধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ও অলি-গলি অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। বিধি নিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বাড়লেও গত ২২ দিন নগরীতে তেমন ভয়াবহ যানজট দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার গণপরিবহনের সঙ্গে ফিরেছে পুরনো যানজট। দুপুর থেকে সন্ধ্যায় ইফতারের আগ পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় মোড়ে মোড়ে।

নগরীর জুবলী রোড, রিয়াজুদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, লালখানবাজার, ওয়াসা, জিইসি, ২ নম্বর গেট, চকবাজার, মুরাদপুর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। লকডাউনের আগের সেই চিরচেনা রূপে ফিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। রোজা রেখে, গরমের মধ্যে ঈদের কেনাকাটাসহ নানান কাজে ঘরের বাইরে আসা নগরবাসী  যানজটের কারণে পড়েন ভোগান্তিতে।

বিকেলে ২ নম্বর গেট এলাকায় যানজটে আটকা পড়েন ঈদের কেনাকাটায় বের হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাসমিন আক্তার। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটায় প্রায় প্রতিদিনই বের হতে হয়। তবে আজকে ভয়াবহ যানজট। এমন যানজট হবে জানলে বেরই হতাম না। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে রিকশায় বসে আছি একই জায়গায়।

৯ মামলায় ১৩ হাজার জরিমানা

গণপরিবহনে সরকারি নির্দেশনা না মানায় নগরীর জামালখান, চকবাজার এবং লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯টি মামলায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিচালিত এসব অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহরিয়ার মোক্তার এবং শান্তুনু কুমার দাশ।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহরিয়ার মোক্তার নগরীর লালখান বাজার এলাকায় পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি ৩টি মামলায় ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। অন্যদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শান্তুনু কুমার দাশ নগরীর জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি ৬টি মামলায় ৯ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেও চালানো হয় অভিযান।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট