চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কৃষকের ভয় এখন ‘কালবৈশাখী’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৭ মে, ২০২১ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

বোরা ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এবার ধানের ভালো ফলনে তাদের চোখে-মুখে খুশির ঝলক লেগে রয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাসে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ দিন আগে ধান কাটা শুরু হয়। তবে শুরুতে শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরির কারণে বেকায়দায় পড়েছিল কৃষকেরা। লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট তীব্র ছিল। তবে বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা নিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসে ছাত্রলীগ। তবে ধান কাটা পুরোদমে শুরু হওয়ার পর শ্রমিক সংকটও কিছুটা কমে আসে। গত সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ পর্যন্ত ৫২ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পূর্বাভাস কৃষকের মনে ভয় ধরেছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হওয়ার পর কালবৈশাখী বা ঝড়ো হাওয়া বইয়ে গেলে পাকা ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে দ্রুত ধান কাটা শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলা বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা চলছে। তীব্র গরমে ধান পাকাও বেড়েছে। প্রকৃতি এবার কৃষকের অনুকূলে থাকায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে ধান কাটা শুরু থেকে অভ্যন্তরীণ শ্রমিক দিয়ে চলে আসছিল ধান কাটা। এখন কাটার ধুম পড়েছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শ্রমিকেরা ইতিমধ্যেই ধান কাটায় ছুটে এসেছেন। এবার শুরু থেকেই শ্রমিকের মজুরি বাড়তি রয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া এলাকার কৃষক মো. হারুন ও আবুল কাশেম বলেন, ‘ধান কাটার শুরুতেই শ্রমিক সংকট ছিল। মজুরিও ছিল বাড়তি। এখন শ্রমিক সংকট কাটলেও মজুরি বাড়তি রয়েছে।’ তারা বলেন, ৮ কানি জমির মধ্যে ৫ কানির মতো ধান কেটেছি। আর তিন কানি জমির ধান কাটতে পারিনি। তবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা এখন অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে পুরোদমে ধান কাটতে শুরু করেছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমি।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বিল গুমাই বিলসহ রাঙ্গুনীয়া, রাউজানসহ উত্তর জনপদে একটু দেরিতে ধানা কাটা শুরু হয়েছে। এখন পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে গণপরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকটও অনেকটা কেটেছে। তবে শঙ্কা রয়েছে কালবৈশাখী নিয়ে।

বৈশাখ মাসে কালবৈশাখীর আশঙ্কা থাকে। এ সময়ে কালবৈশাখীর ঝড় হলে মাঠের পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলায় এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৯ হাজার ৪ শত হেক্টর জমি। চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে। এখনো অর্ধেক জমির পাকা ধান জমিতে রয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, বৈশাখ মাসের প্রথম থেকে ধান কাটা শুরু হয়। এছাড়াও ধানের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা খুশি।

চন্দনাইশে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃৃতি রানী সরকার বলেন, চন্দনাইশে ৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরোদমে ধান কাটা চলেছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট