চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার থাবায় জনশক্তি রপ্তানিতে হোঁচট

মোহাম্মদ আলী

৭ মে, ২০২১ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

করোনায় হোঁচট খাচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া অন্য কোন দেশে যেতে পারছে না নতুন জনশক্তি। করোনায় বিমান চলাচল বন্ধসহ নানা কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র জানায়, বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে শ্রমিক প্রেরণ করে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এর পরের অবস্থানে ওমান, কাতার, জর্ডান ও কুয়েত। বিগত কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুরও বাংলাদেশের জন্য ভালো বাজার হয়ে উঠেছে। তবে করোনার থাবায় জনশক্তি রপ্তানিতে রীতিমতো হোঁচট খায় বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখের বেশি কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন বিভিন্ন দেশে।

এর মধ্যে সৌদি আরবে সর্বোচ্চ ৪ লাখের মতো, ওমানে ৭২ হাজার ও কাতারে গেছেন ৫০ হাজারের কিছু বেশি। ২০২০ সালে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য থাকলেও প্রথম তিন মাসে পাঠানো সম্ভব হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৮১ হাজার। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই গেছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার এবং ওমানে ১৭ হাজার। বাকি বাজারগুলোয় গেছেন হাতেগোনা কয়েকজন।

সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশের একমাত্র অবলম্বন সৌদি আরবের শ্রমবাজার। এর পর থেকেই করোনা মহামারীতে বন্ধ থাকে শ্রমিক প্রেরণ। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও তুলনামূলক জনশক্তি রপ্তানি হয়নি। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে করোনার প্রভাব বৃদ্ধি পেলে জনশক্তি রপ্তানি হোঁচট খায়।  সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সাল থেকে  বিদেশে বাংলাদেশি জনশক্তির কর্মসংস্থান শুরু হয়।

ওই বছরই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি কর্মসংস্থান হয় ৬ হাজার ৮৭ জন। এরপর বিদেশে বাড়তে থাকে বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান। বিগত ৪৫ বছরে বিদেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়। এর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইতালি, জাপান, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনশক্তির কর্মসংস্থান হয় বেশি।

জনশক্তি কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হয় সৌদি আরবে। ৪৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি সেদেশে যায়। এরপরের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশ হচ্ছে ওমান প্রায় ১১ লাখ, কুয়েতে সোয়া ৫ লাখ, কাতার প্রায় ৫ লাখ, মালয়েশিয়ায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ এবং সিঙ্গাপুরে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি।

এদিকে, নানা জটিলতায় হাতছাড়া হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার। করোনা অতি মহামারীর কারণে কর্মী সংকটে রয়েছে দেশটি। সংকট কাটাতে ইপিএসভিত্তিক (এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম) দেশগুলো থেকে প্রতিনিয়ত কোরিয়া ঢুকছে নতুন কর্মী। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। অনেক মালিকও তাদের কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে মুখিয়ে আছে। অনেক মালিক আটকে পড়া কর্মীর জন্য অপেক্ষা করছেন। নতুন কর্মী দেশটিতে প্রবেশ করতে পারছে না। এ অবস্থায় কোটা পূরণেও ব্যর্থ বাংলাদেশ।

প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরিয়ান মালিকরা বাংলাদেশিদের নিয়োগ দিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনে দূতাবাস। কিন্তু সেটাও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

হতাশ ইপিএস কর্মীরা জানান, সমস্যা নিয়ে সবাই আলোচনা করেন। কিন্তু সমাধান কিছু হয় না। অথচ এ একটি বাজার সক্রিয়ভাবে ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বাজারে নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে প্রায় প্রতিটি ইপিএসভিত্তিক দেশ সঠিকভাবে পরীক্ষা করে কর্মীদের কোরিয়ায় পাঠায়। কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষা সঠিকভাবে করানোর তাগিদ দেয়।

যেন করোনা আক্রান্ত কোনো শ্রমিক দেশটিতে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশ করা ৩৩ জন কর্মীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল থেকে আবারও বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য কোরিয়ার দরজা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস আগেও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানে প্রচুর পরিমাণে জনশক্তি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে জনশক্তি রপ্তানি হোঁচট খাচ্ছে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট