চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বালুখেকোদের দখলদারিত্ব চলছেই

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৬ মে, ২০২১ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীতে বালু উত্তোলনের নামে নতুন নতুন এলাকা দখল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শাহ আমানত সেতু ও কালুরঘাট সেতুর এলাকায় কৌশলে চলছে দখলদারিত্ব। কালুরঘাট সেতু এলাকায় তিন মাসের বালু আনলোডিং অনুমতি নিয়ে নদী দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ রয়েছে। নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা ঝুঁকিও বাড়ছে। ইতিমধ্যেই কর্ণফুলীর মোহনায় একটি বাল্কহেড দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে বালু আনলোডিং ও বিক্রয়কেন্দ্র। সরকারি খাস জমি দখল করেই গড়ে ওঠেছে এসব বালু আনলোডিং কেন্দ্র। সেতুর পিলারের সঙ্গে নোঙর করা হচ্ছে বালুর বাল্কহেডগুলো। বালু আনলোডিংয়ের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে সেতু সংলগ্ন এলাকা।

জেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে যাচ্ছেতাই দখলদারিত্ব চলে আসছে। এছাড়াও রয়েছে অবৈধ বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড, খালে পণ্য ওঠা-নামার ঘাট, মাছ বাজার, দোকানপাট ও নানা স্থাপনা। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা বেদখল হয়ে যাচ্ছে সরকারের।  বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। গত সপ্তাহে কর্ণফুলীর মোহনায় বালুর একটি বাল্কহেড ডুবে যায়। এতে বিপদজ্জনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ মাঝি-মাল্লাদের।

কালুরঘাট সেতু এলাকায় দেখা যায়, সেতুর দুই পাড়েই গড়ে ওঠেছে ১০-১২টি বালু তোলা ও বিক্রয়কেন্দ্র। রেলওয়ে জায়গায় চলছে এই বালু-বাণিজ্য। বন্দরের বালুমহাল ইজারাদারদের দাপট চলছে সেতু এলাকায়। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের রাউজান বালুমহাল ইজারাদার বন্দর এলাকায় বালু আনলোডিং কেন্দ্রকে ঘিরে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। বন্দরের এস্টেট বিভাগ থেকে তিন মাসের নদীর তীর ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নদী দখলের পাঁয়তারা চলে আসছে বলে অভিযোগ। 

স্থানীয়দের দাবি, বন্দর ও রেলওয়ে থেকে অস্থায়ী অনুমতি নিয়ে স্থায়ীভাবে নদী দখলদারিত্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বন্দর থেকে তিন মাসের একটি অনুমতিপত্র নিয়ে কৌশলে নদীর তীর ব্যবহারের নামে নতুন করে নদী দখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বন্দর এস্টেট বিভাগ চার শর্তে একটি প্রতিষ্ঠানকে কালুরঘাট সেতু এলাকায় বালু আনলোডিংয়ের অনুমতি দিয়েছে।

এতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে রাউজানের ওপরে কর্ণফুলী বালুমহাল-১ থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। কালুরঘাট সেতু এলাকায় ভলগেট থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু আনলোডিংয়ের অনুমতি দিয়েছে বন্দরের এস্টেট বিভাগ।

শর্তে বলা হয়েছে, নদীর ব্যাংকলাইন থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে বালু স্তূপ করা ও নদীর তীর ভরাট করা যাবে না। নদী তীর ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। এস্টেট বিভাগ বিভাগ বৈধতা দিলেও এই অনুমতিকে অবৈধ বলে দাবি হাইড্রোগ্রাফারের।

হাইড্রোগ্রাফার বিভাগ বলছে, হাইড্রোগ্রাফি সার্ভের মাধ্যমে নদীর শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতুর এলাকা পর্যন্ত বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। শুধুমাত্র বন্দরের ড্রেজিং প্রতিষ্ঠানই এই এলাকায় ড্রেজিং ও আনলোডিং করতে পারবে। কালুরঘাট সেতু এলাকায় এ কে খান ডকের পাশে একটি আনলোডিং ড্রেজার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে ড্রেজিং কাজে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। তাই আনলোড ড্রেজার দ্রুত অপসারণ করা দরকার। তবে ওই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অনুমতি ৩১ মার্চ শেষ গেছে।

বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ড্রেজার মেশিন ও পাইপ লাইন সরিয়ে না নেওয়ার কারণে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। প্রয়োজনে অনুমতির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে। একইভাবে নতুন করে দখলের বিরুদ্ধেও নির্দেশনা রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান ঢিলেমির সুযোগে চলছে দখলদারিত্ব। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা গিলে খাচ্ছে ভূমিখেকোরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট