চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুদকের ভেতরের দুর্নীতিবাজ ক্যান্সার ছেঁটে ফেলা হোক

উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ

২৮ জুন, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) যদি দুর্নীতিবাজ থাকে তাহলে সেসব দুর্নীতিবাজ ‘ক্যান্সারগুলোকে’ ছেঁটে ফেলতে বলেছে হাইকোর্ট। সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলার ‘ভুল আসামি’ জাহালমের বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা স্বতঃপ্রণোদিত রুলের শুনানিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এমন মন্তব্য করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ।-বাংলানিউজ
পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালতের মনোভাব দুদক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, দুদকে যদি কোনো দুর্নীতিবাজ থাকে তাহলে তাকে বাদ দিন। এই জায়গাটিতে দুর্নীতিবাজ থাকা উচিৎ না। আমাদের কথা হচ্ছে দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। আমরা চাই স্বাধীন এই সংস্থাটি স্বচ্ছতার সঙ্গে

কাজ করুক। আদালত আরও বলে, এখন দেশে অর্থনীতির স্বর্ণযুগ চলছে। তাই এখন আর্থিক অপরাধ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সরকার দুদককে অনেক পাওয়ার দিয়েছে। তাই সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দুদককে কাজ করতে হবে। দুদক শক্তিশালী না হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। দুদকে যদি দুর্নীতিবাজ থাকে তাহলে সেসব দুর্নীতিবাজ ক্যান্সারগুলোকে ছেঁটে ফেলুন।
গত জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করে বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতিকে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেছে আদালত।
পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেয় এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছে। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে। পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট গত ১৭ এপ্রিল জাহালম কা-ে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে। এর মধ্যে দুদকের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টে জাহালম বিষয়ক সুয়োমুটো (স্বতঃপ্রণোদিত রুল) রুলের শুনানি ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়।
ওই সময় দুদকের যুক্তি ছিলো, যে বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়েছে, সে বেঞ্চের দুদক সংক্রান্ত মামলা শুনানির এখতিয়ার নেই। দুদকের জন্য আলাদা বেঞ্চ আছে। তখন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। পরে ১৩ মে সে স্থগিতাদেশ তুলে দেয় আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের ওই আদেশের পরে বৃহস্পতিবার এ বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে জাহালম নিয়ে দুদকের করা অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট আগামী ১১ জুলাই আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়।
জাহালম নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট