চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উৎস কর দশমিক ২৫% নির্ধারণ করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:২৫ অপরাহ্ণ

কাঁচামাল সংকটের কারণে বর্তমানে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ উৎপাদনের সক্ষমতার মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে হিমায়িত খাদ্যের উৎপাদন খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একই সাথে এ খাতের রপ্তানিকারদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন  হতে হচ্ছে।

চলমান এই সংকট থেকে উত্তরণে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির উপর আরোপিত ১ শতাংশ উৎস কর (সোর্স ট্যাক্স) পরিবর্তন করে দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি মো. আমিন উল্লাহ। আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) মোট ৫ দফা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে হিমায়িত খাদ্য (চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ) রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠন বিএফএফইএ।

সংগঠনের সভাপতি আমিন উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিপরীতে ইউরো, রুবল ও ইয়েন-এর মূল্যস্ফীতি ঘটায় হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের রপ্তানিমূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে আমরা কমমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এছাড়া চিংড়ি ও মাছ দ্রুত পঁচনশীল পণ্য বিধায় এই পণ্যটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস হলেও হিমাগারে দীর্ঘদিন সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই। কারণ ব্যাংকঋণের মাধ্যমে হিমায়িত পণ্য ক্রয় হওয়ায় নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হয়।

এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে এ জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে উৎস কর ১ শতাংশ অত্যন্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই এই কর দশমিক ২৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তার উপর অগ্রিম আয়কর ১০% কর্তনের বিধান বাতিল করা প্রয়োজন উল্লেখ করে আমিন উল্লাহ বলেন, সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা কখনোই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের আয় হতে পারে না। কিন্তু সহায়তাকে আয় হিসেবে দেখিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩% আয়কর কর্তনের বিধান চালু করা হয়। পরবর্তীতে সেটি ১০% এ উন্নীত করা হয়। কিন্তু নগদ সহায়তা এই খাতের উৎপাদন খরচেরই একটি অংশ। তাই অনতিবিলম্বে আসন্ন বাজেটে নগদ সহায়তার উপর অগ্রিম আয়কর ১০% কর্তনের বিধান বাতিল ঘোষণা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার স্বার্থে হিমায়িত খাদ্যের উপর কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা প্রয়োজন রয়েছে বলেও দাবি করেন বিএফএফইএ সভাপতি। তিনি দাবি করেন, তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিখাতে কর্পোরেট করের হার নন-পাবলিক, পাবলিক ও সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৫%, ১২.৫% ও ১২% নির্ধারণ করা জরুরি।

বিএফএফইএ’র আরো দাবি, বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের স্বার্থে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই রপ্তানি খাতে দেওয়া প্রণোদনা বাবদ অর্থের ৫০% অনুদান হিসেবে ঘোষণা করা সময়ের দাবি। এছাড়া অবশিষ্ট ৫০% অর্থ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ হার সুদে এক বছরের পরিবর্তে তিন বছরে পরিশোধের সময় বর্ধিত করা প্রয়োজন। এছাড়া, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানিতে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা অন্যান্য কৃষি পণ্যের ন্যায় চিংড়িতে ১০% এর পরিবর্তে ২০% এবং অন্যান্য মাছে ৫% এর পরিবর্তে ১০% এ উন্নীত করা আবশ্যক।

এসব দাবির প্রেক্ষিতে আমিন উল্লাহ বলেন, কম উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং সস্তামূল্যের ভেন্নামি চিংড়ির প্রভাবের কারণে আমরা আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় (মার্চ’২০২১ পর্যন্ত) প্রায় ১৩.২৫% পিছিয়ে আছি। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাবে আজ চিংড়ি খাতের আন্তর্জাতিক চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।

ফলে গত বছরের শুরু হতে চিংড়ির দাম ১-৩ ডলার পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এ ধরণের বিরূপ অবস্থার কারণে আমাদের ৫৯৭.৭৮ লক্ষ মার্কিন ডলার মূল্যের (৪৬০.৬১ কোটি টাকা) ২৯০টি কনসাইনমেন্টের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। এর প্রভাব রপ্তানি অন্যান্য খরচের উপরেও পড়ে। তদুপরি, কনটেইনার স্বল্পতার কারণে রপ্তানি খরচ প্রতি ৪০ ফুট কনটেইনারে ১২০০ থেকে ১৬০০ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল নেতিবাচক প্রভাবে বহুল সম্ভাবনাময় এ খাত আজ হুমকির সম্মুখীন। এসব বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে আমাদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে এই খাতকে বাঁচাতে সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে, এমনই প্রত্যাশা করছেন বিএফএফইএ’র এই নেতা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট