চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা এবারো লোকসানের শিকার

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

২৩ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

ভালো নেই নগরীর হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক ও কর্মচারীগণ। করোনার কারণে চলমান লকডাউনে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো খোলা থাকলেও ব্যবসা হচ্ছে না আগের মত। গতবারের ন্যায় এবারও বড় অংকের লোকসান গুনছেন এ ব্যবসায়ীরা। 

প্রতি বছর রমজানের সময় প্রতিটি হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইফতার পার্টি হতো। এতে বেশ জমজমাট থাকতো হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনের কারণে হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে বন্ধ ইফতার পার্টিসহ ভিতরে বসে খাবারের ব্যবস্থা। এতে ব্যবসায় বড় ধরণের লোকশান গুনছেন বলে জানান নগরীর হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। এমন খারাপ দিন শুধু এবছরই নয়, গেল বছরও কাটিয়েছেন।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ ব্যবসায়ীরা সরকার থেকে পায়নি কোনো প্রনোদনা। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মহানগরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম নগরীতে এই সমিতির আওতাভুক্ত ছোট-বড় মিলে পাঁচ হাজার হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে। এ হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে কাজ করে ৩ লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। করোনায় লকডাউনের কারণে ব্যবসা হচ্ছে না এ ব্যবসায়ীদের। কিন্তু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ তিন লাখ হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকের জীবন।

অনেকে এরই মধ্যে কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ইলিয়াস আহমেদ ভূইয়া জানান, দুই বছর ধরে আমরা হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকরা খুবই খারাপ সময় কাটাচ্ছি। আমাদের দেখার যেন কেউ নেই। অন্য সকল ব্যবসায়ীদের কম বেশি সরকার অনুদান দিয়েছে। কিন্তু আমরা দুই বছরে দুইটা কানাকড়িও পাইনি। কেউ খবর রাখেনি আমরা কেমন আছি।

আমরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে এবিষয় কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। প্রশাসককে লিখিতভাবেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি আমাদের চিঠির কোনো উত্তরই দেননি। অথচ আমরা সরকারকে বিশাল অংকের ভ্যাট ও প্রায় ৮-১০ রকমের লাইসেন্স ফি দিয়ে থাকি। আমাদের একটা রেস্টুরেস্টে মাসে এক থেকে দুই লাখ টাকার বেশি খরচ থাকে। এছাড়া এখন ব্যবসা বন্ধ আমরা আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে খুবই দুচিন্তায় আছি। কিভাবে তাদের বেতন দিবো।

সাদিয়া’স কিচেন চট্টগ্রামের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. মেজবাউল হক বলেন, দুই বছর ধরেই ব্যবসার খুবই করুণ অবস্থা। চট্টগ্রামে সাদিয়া’স কিচেনে ১৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। দোকান খোলা থাকলেও এ ১৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর খাবার খরচও উঠছে না। আমার প্রতি বছর ১০ রমজানের মধ্যে যে আয় হয় তা দিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বোনাসের টাকা দিয়ে দিতাম। কিন্তু গেল বছর ও এবছর মালিক পক্ষ যে টাকায় পণ্য কিনছে সে টাকাটাও উঠাতে পারছে না। এ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে নিজের পকেট থেকে।

চকবাজারের হ্যাঙ্গার’স কিলারর্স রেস্টুরেন্টের মালিক মো. সাইফুল হাকিম বলেন, আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। চট্টগ্রামে হোটেল-রেস্টুরেন্টের জন্য শক্তিশালী সংগঠন নেই। যেও একটা আছে এটা নামমাত্র। এদের কোনো কার্যক্রম নেই। আমার হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা চাই আমাদের জন্য সরকার কিছু একটা ভাবুক। আমি আর্থিকভাবে একেবারেই ভেঙে পড়েছি। গতবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিয়েছি পকেট থেকে এবছর কি করবো ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছি না। আমার কর্মচারীরা হোটেলের ভিতরে ঘুমাচ্ছে আর নামাজ পড়ছে। এদের যদি এখন আমি চাকরি থেকে বের করে দিই তবে তারা কই যাবে। আমি এমনটা করতে পারিনা তাদের সাথে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট