চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সব ধর্মের মানুষের সম্মিলন ঘটে শ্রীপুর বুড়া মসজিদে

সেকান্দর আলম বাবর, বোয়ালখালী

২২ এপ্রিল, ২০২১ | ২:০১ অপরাহ্ণ

আরাকান রাজ্যের অংশ বোয়ালখালী; হাওলা পরগনা ও সারোয়া চাকলা দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। মঘ রাজ্যের হাওলা অঞ্চলে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সবুজ সমারোহে প্রকৃতির নির্মল স্থান শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রাম। প্রচলিত আছে, হযরত সৈয়দ মা’রূফ শাহ্ (রহ.), হযরত সৈয়দ কুতুব শাহ্ (রহ.), হযরত সৈয়দ কালন্দর শাহ (রহ.)সহ বারজন ধর্ম প্রচারক খ্রিস্টীয় ১৪শ শতাব্দীতে নদীপথে ইসলাম প্রচারের জন্য বোয়ালখালী এলে-এ অঞ্চলের সৌন্দর্য অবলোকন করে বিমোহিত হন এবং নামকরণ করেন শ্রীপুর। কালের পরিক্রমায় শ্রীপুর বুড়া মসজিদের জন্য সকল ধর্মের মানুষের কাছে এলাকাটি আলাদা পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান বোয়ালখালীসহ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল ধর্মের মানুষের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে শ্রীপুর বুড়া মসজিদ। পাহাড়-নদী-সমতল ভূমির এক অনন্য মিলনস্থল ৮নং শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের ঠিক মধ্যখানে এবং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে এ মসজিদটি অবস্থিত।

এ মসজিদে শুধুমাত্র মুসলিমরা আসেন তা নয়-বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষজন আসেন বরকত, ফযিলত, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায়। শ্রীপুর বুড়া মসজিদ কখন প্রতিষ্ঠা হয়েছে তার দিনক্ষণ, সাল কারও জানা নেই। স্থানীয়রা এবং গবেষকদের ধারণা আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে এ মসজিদ নির্মিত হয়। চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিম চৌধুরী মসজিদের প্রাথমিক কাঠামোগত ভিত্তি স্থাপন করেছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। জনশ্রুতি আছে, সে সময়ে সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় কেউ যাওয়ার সাহস করত না। এশার, গভীর রাতে এবং ফজরের নামাজে এখানে আল্লাহর মুমিন মুসলমান কবরবাসীগণ সাদা পোশাকে নামাজ আদায় করিতেন। রাত্রে গায়েবী আযান পড়ত।

বুড়া মসজিদ নামকরণ যে তথ্য পাওয়া যায় তা হচ্ছে, শেখ নাছির উদ্দিন সাহেবের পুত্র, থানাদার ওয়াছিন চৌধুরীর পিতা প্রচলিত নাম ‘বুড়া মৌলানা’ ইবাদত বন্দেগিতে এতই মশগুল থাকতেন যে, তিনি অনেকাংশ পার্থিব জীবনের মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিকতায় মনোনিবেশে মত্ত থাকতেন। বুড়ো বয়সের পুরো সময়টা তিনি ওই মসজিদে বসে নামাজ-জিকির-আজকার করে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর নামানুসারে এ মসজিদটির নামকরণ করা হয় “বুড়া মসজিদ”। কেউ কেউ এখন এটাকে বুজুর্গ মসজিদও বলেন।

১৯৪০ সালে সবকিছু ভেঙে নতুন করে ছাদ জমিয়ে পাকা করা হয়। এ পাকা অংশ বর্তমান নতুন মসজিদ কাঠামোর মাঝখানে অস্থিত্বের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। ১৯৭৪ সালে ৬শ জনের একসাথে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে এর সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৮৬ সালে এটিকে ২ তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এখানে একসাথে প্রায় ২ হাজারেরও অধিক মুসল্লি একসাথে নামাজ পড়তে পারেন। তারপরও প্রতি শুক্রবার জায়গা সংকুলান না হওয়াই বাইরেও নামাজ আদায় করতে হয় হাজারো দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের।

আজ থেকে ২শ বছর পূর্বে এখানে আধিপত্য ছিল হিন্দু জমিদারদের। লক্ষীন্দ্র মহাজন নামে এক প্রতাপশালী জমিদার মসজিদটিকে পাকা করে দেয়ার প্রস্তাব করলে মুসলিমরা তা প্রত্যাখান করে। তবে পরবর্তীতে তাঁর পুত্র ইসলামের এ দৃঢ় চেতা মনোভাবে আকৃষ্ঠ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সারা জীবন এ মসজিদে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেন।

সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারমের বক্তব্য : নতুন মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। ২০১৪ সাল থেকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী বুজুর্গু এ মসজিদটির গুরুত্ব সকল ধর্মের কাছে সমান গুরুত্ব বহন করে। আমরা এটির গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য সকলের কাছে তুলে ধরতে কাজ করছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট