চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কাঁচাবাজারে

ইফতেখারুল ইসলাম

২১ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর কাঁচাবাজারগুলো মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বাজারের প্রবেশমুখে নেই ডিসইনফেকশন বুথ (জীবাণুমুক্তকরণ ঘর)। গত বছর করোনাকালে যেসব কাঁচাবাজারের প্রবেশ মুখে জীবাণুমুক্তকরণ ঘর স্থাপন করা হয়েছিল তাও এখন অকেজো। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ এখন তুঙ্গে। প্রতিদিন মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। অপরদিকে ঠাসাঠাসি করে কেনা-কাটা করছেন ক্রেতারা। সরকার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অবনতির কারণে

গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণায় বলেছে, কাঁচাবাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সচেতন মহলের অভিমত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান এবং কাঁচাবাজার একেবারে বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কিভাবে খোলা রাখবে তার একটা গাইডলাইন বাজার পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে দেয়া উচিত। যদি তারা তা মানতে না চায় তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারে। যেসব এলাকায় জনসমাগম বেশি সেই বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে।

চট্টগ্রামের বিভাগের পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘পাড়ায়-মহল্লায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলা হলে সংক্রমণ দ্রুত আয়ত্বে আনা সম্ভব।’

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, গতকাল মোহরা ওয়ার্ডের কাজিরহাট কাঁচাবাজারে যেন ক্রেতার ঢল নেমেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা গাদাগাদি করে বেচা-কেনা করছেন। এই বাজারের চিত্র দেখে বুঝার উপায় নেই যে, দেশে এখন করোনা মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করার কারণে লকডাউন চলছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকে মুখে মাস্কও নেই। নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেটস্থ কর্ণফুলী কাঁচাবাজারে গত বছর একাধিক ডিসইনফেকশন  বুথ বসানো হয়। ক্রেতা এবং বিক্রেতারা বাজারের এসব বুথ দিয়ে প্রবেশের সময় নিজেকে জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারতো।

শুরুতে এসব বুথ চালু থাকলেও কিছুদিন পর অকেজো হয়ে পড়ে। এখনো মেরামত করা হয়নি। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। নগরীর অভিজাতদের বাজার হিসেবে পরিচিত কাজির দেউড়ি বাজারের প্রবেশ মুখেও গত বছর জীবাণুমুক্তকরণ ঘর বসানো হয়েছিল। তা এখন নেই। গত বছর করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে চকবাজার কাঁচাবাজারকে প্যারেড ময়দানের এক পাশে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এবার কোন কাঁচাবাজার উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা বাজার কর্তৃপক্ষ। আগ্রাবাদ সিডিএ মার্কেটসহ নগরীর সব কাঁচাবাজারের চিত্র একই রকম। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। তাছাড়া বাজারের গলিগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মানার মত বড় নয়। একজন ক্রেতা কেনাকাটা করার সময় আরেক ক্রেতা দরদাম করতে গেলেই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ হয়ে যায়। তার উপর ক্রেতার অতিরিক্ত চাপ হলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই স্বাস্থ্যবিধির কথা বেমালুম ভুলে যায়। এমন চিত্রই নগরীর কাঁচাবাজারগুলো দেখা গেছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান পূর্বকোণকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে সচেতন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, হাট-বাজারের বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর ভ্রাম্যমাণ অভিযান বাড়ানো হয়েছে। গতকাল তিনটি টিম বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছে। তারা একএকটি বাজারে আড়াই ঘণ্টা ধরে ছিলেন। আজ (বুধবার) থেকে ছয়টি টিম বাজার মনিটরিং করবে। মনিটরিং টিম বিশেষ করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও বিক্রয়ের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেবে।’ বিদ্যমান বাজারে গাদাগাদি করে বাজার-সওদা করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাজার স্থানান্তর করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে হাট-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট