চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ছিনতাইকারী ও মাদকের আখড়া কক্সবাজারের কবিতা চত্বর

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

২৭ জুন, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সৈকতের কবিতা চত্বরে ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে। ভোর থেকে গভীররাত পর্যন্ত কবিতা চত্বরের আশপাশে অপরাধীদের বিচরণও ভয়াবহ। ইতোমধ্যে অনেকেই সেখানে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। এমনকি বাদ যায়নি পুলিশ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তাও। পর্যটক ও স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনের লোকজনও কবিতা চত্বরে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিল। বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনও অবগত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টটিতে অনেক পর্যটক ঘুরতে যান। পর্যটকের চেয়ে বেশি স্থানীয়রা সেখানে সময় পার করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয়দের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। এমনকি অনেকেই ঝাউবাগানের ভেতরে মনোরম পরিবেশে চেয়ার ছাতায় বসে সময় পার করেন। বাসায় রান্না করে পরিবার নিয়ে কবিতা চত্বর নিয়ে খাবার দাবার সারেন অনেকেই। এই সুযোগে দলভিক্তিক কিছু ছিনতাইকারী সেখানে অবস্থান করেন নিয়মিত। মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর নামে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিনতাইকারী ও মাদক সেবনকারীদের বিচরণ থাকে বেশি। ঝাউবাগানের ভেতরে কাউকে ভ্রমণে দেখলে ছিনতাইকারীরা প্রথমে তাকে টার্গেট করে। লোকজনের কম উপস্থিত দেখলেই ভ্রমণকারীকে মারধর করে সব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। গত তিন মাস আগেই কবিতা চত্বরে ভ্রমণের সময় এক পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। ছুরিকাঘাত করে তার সব কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটকও করেন। কক্সবাজার সদর থানার এসআই দেবব্রত রায় বলেন, কবিতা চত্বর পয়েন্টে ঘুরতে গেলে এক পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করেছিল ছিনতাইকারীরা। পরে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এখনো সেখানে ভ্রমণের ছদ্মবেশে অনেক ছিনতাইকারী অবস্থান করে।
এছাড়া একবছর আগে সেখানে ছিনতাইয়ের শিকার হন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। ছিনতাইকারীরা এই কর্মকর্তাকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সবকিছু ছিনিয়ে নেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মালামালগুলো উদ্ধার করেন।
গত রবিবারও কবিতা চত্বরের দক্ষিণ পাশে ঝাউবাগানের ভেতরের ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে এক প্রেমিক জুটি। দুপুরের সময় তিনজন ছিনতাইকারী তাদের চাকু দেখিয়ে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। নিজেদের মান সম্মানের ভয়ে তারা কোথাও অভিযোগও দায়ের করেনি বলে জানা গেছে।
কবিতা চত্বরের একজন কিটকট ব্যবসায়ী জানান, পর্যটকদের অন্যতম একটি পয়েন্ট এটি। কিন্তু পুলিশ বা জেলা প্রশাসনের তেমন তদারকি নেই এখানে। পুলিশ বক্স থাকলেও পুলিশ থাকে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের দখলে থাকে এই পয়েন্টটি। তাদের দেখলেও বুঝা যাবে না তারা ছিনতাইকারী। প্রতিনিয়ত এখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ঝাউবাগানের ভেতরে ছিনতাইয়ের ঘটনা আরো বেশি। সাদা পোশাকে কোন পুলিশ কৌশলে দিনের বেলায় অভিযান চালালে নিশ্চিত তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব।
একটি সুত্র জানায়, কবিতা চত্বরে একটি দোকান রয়েছে। ইলিয়াস নামে একব্যক্তি এই দোকানের মালিক। সন্ধ্যার পর কিন্ত এই দোকানের আড়ালে খুচরা ইয়াবা বিক্রি হয়। সেখানে অপরাধীরা আড্ডা জমান বেশি। দোকানের পাশাপাশি গাড়ি পরিস্কারের সেন্টারও দিয়েছে ইলিয়াস। মোটর সাইকেল পরিস্কারের নামে সেখানে অবস্থান করে ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারীরা। ইলিয়াস বিভিন্ন জায়গায় খুচরা ইয়াবাও সরবরাহ দেয়। যার কারণে দোকানে তেমন থাকেন না তিনি। অন্য লোকজন দিয়ে দোকান পরিচালনা করে ইলিয়াস। কবিতা চত্বরে যেসব অপরাধ সংগঠিত হয়ে সব কিছু ইলিয়াসের জানা রয়েছে বলে জানান গেছে। এক বছর আগে এই দোকানটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু কৌশলে আবারও সেখানে দোকান বসিয়ে মাদকের বিক্রয় কেন্দ্র বানিয়েছে।
বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা অনেকেই দলবেধে সন্ধ্যার পর প্রায় সময় ঘুরতে যায় কবিতা চত্বরে। কিন্তু সেখানে সবসময় অন্ধকার। কোন পুলিশও দেখা যায় না। পর্যটকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। জেলা প্রশাসন চাইলে পর্যটকদের বিনোদনের মাত্রা সেখানে বাড়িয়ে দিয়ে অপরাধমুক্ত করতে পারে। এটি শুধু আন্তরিকতার অভাব।
কক্সবাজার পিপ্লস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, কবিতা চত্বর মোড়ে এখন নতুন নতুন মাস্তান-সন্ত্রাসীর আনাগোনা বেড়ে গেছে। পড়ন্ত বিকেল থেকেই ঝাউবিথীর আড়ালে এসব সন্ত্রাসীর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। মোটরবাইক নিয়েই শিকারের অপেক্ষায় থাকে তারা। অনেক নারী ভ্রমণকারীও এসব সন্ত্রাসীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। পার্শ্বেই রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে একটি পুলিশ বক্স। তবে সেখানে পুলিশের কোনো সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আশরাফ জানিয়েছেন, কবিতা চত্বরে লাইটিংসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুব দ্রুত সময়ে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা আরো বাড়ানোর পদক্ষেপ নিবো। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সকলের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। সকলের সহযোগিতা পেলেই কোন কিছু অসম্ভব থাকবে না আশা করি।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন সময় ছদ্মবেশে কবিতা চত্বর মোড়ে ও ঝাউবাগানে অবস্থান করে বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দেয়। এই টহল আরো বাড়ানো হবে। এমনকি ওখান থেকে বেশ কয়েকজন অপরাধীকে ইতোমধ্যে আটকও করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট