চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভয়ংকর অস্ত্র টিপছোরা

নাজিম মুহাম্মদ 

২০ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:১০ পূর্বাহ্ণ

চারশ টাকা দামের ছয় ইঞ্চি সাইজের ছুরিতে ঘটছে খুন, ছিনতাই ডাকাতির মতো ঘটনা। হাতের কাছেই পাওয়া যায় অস্ত্রটি। ফুটপাত থেকে নামিদামি মার্কেটের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এমন অস্ত্র।

চীনের তৈরি বিভিন্ন সাইজের এ ছুরি ইচ্ছে করলেই ভাঁজ করে বাটের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলা যায়। আর দ্রুত খুলে যে কাউকে সহজেই আক্রমণ করা যায়। স্টেনলেস স্টিলের তৈরি বিদেশি এই ছুরির একপাশ ধারালো। ওই অংশ খোলা না থাকায় পকেটে রেখে নিরাপদে হাঁটাও যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে নগরীতে। সবকটি ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে চীনের তৈরি একই ধরনের ছুরি। নগরীর থানাগুলোতে এ ধরনের ছুরি নিয়ে প্রতিদিন কেউ না কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, এই ধরনের ছুরি গৃহস্থালী কিংবা প্রয়োজনীয় কোন কাজেই ব্যবহার হয় না। ছিনতাইকারী, ডাকাত ও কিশোর-তরুণরা এসব ছুরি ব্যবহার করছে। তবে প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়া এই বিপদজনক অস্ত্রটির দিকে নজর দিয়েছে নগর পুলিশ। প্রকাশ্যে টিপ কিংবা ছোট আকারের ছুরি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে নগর পুলিশ। টিপছুরি  পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দোকানদারকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নগরীর ষোল থানাকে নির্দেশনা দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ আশপাশের মার্কেটগুলো থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু টিপ ছুরি জব্দ করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জানান, চীনের তৈরি ছোট আকারের টিপছুরি ছিনতাইকারীরা ব্যবহার করছে। হাতের মুঠোয় নিয়ে এ ছুরি ব্যবহার করা অনেকটা নিরাপদ। এসব ছুরি দিয়ে হত্যাকা-ের মতে ঘটনাও ঘটে অনেক সময়।

ওসি নেজাম বলেন, এ ছুরি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে নগর পুলিশ। ইতিমধ্যে রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও আশপাশের মার্কেট থেকে ছুরিসহ ছিনতাইকারীরা ব্যবহার এমন বেশ কিছু সরঞ্জাম আমরা উদ্ধার করেছি। এসব ছুরি বিক্রি না করতে মাইকিংও করা হয়েছে।

আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (ওসি) জহির হোসেন জানান, টিপছুরিতে ঘটছে ছিনতাইসহ নানা ঘটনা। তবে এ ছুরি বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশনা দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার।

গত ১৮ মার্চ লালখান বাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সাফায়েত হোসেন নামের ১৯ বছর বয়সী এক কলেজছাত্র আহত হয়েছেন। ১৮ মার্চ রাতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম  মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহত সাফায়েত ফেনীর দাগনভূঞার রাজাপুর মিয়া বাড়ির মীর হোসেনের  ছেলে এবং পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র।

জানা  গেছে, টাইগারপাস  থেকে লালখান বাজারে যাওয়ার সময় ২ জন ছিনতাইকারী তাকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

পরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে সুমন বিল্লাহ নামে এক যুবকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।  গ্রেপ্তারের পর সুমন বিল্লা জানান, তারা সাফায়াতের কাছ থেকে তার মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়েছিলো। পরে সাফায়েত দিতে না চাইলে ছিনতাইকারীরা  সাফায়েতকে টিপছুরি দিয়ে ১৬টি ছুরিকাঘাত করে। ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে ছুরিটি উদ্ধার করে গোয়েন্দারা।

গত ২৫ মার্চ পেশাদার ছিনতাইকারী ইমাম হোসেনকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে আকবরশাহ থানা পুলিশ। তার কাছে একটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও টিপ ছুরি পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ধরনের ছুরি ব্যবহার করেই ২০১৮ সালে নগরীতে চারজনকে খুন করা হয়েছে। এরমধ্যে নগরীর বন্দর থানার ধুপপুল এলাকায় একই ধরনের ফোল্ডিং ছুরি দিয়ে বাসার ভেতরে জবাই করে খুন করা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীকে। সজল খুনের ঘটনায়  চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ( মেট্টো)। পরে কিশোরদের দেয়অ তথ্য অনুযায়ী বন্দর থানার মাইলের মাথা এলাকার হাজী শামছুল হকের পুকুর থেকে সজল হত্যায় ব্যবহৃত  চীনের তৈরি ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ।

২০১৮ সালের ১৬ জুন নগরীতে তিনটি হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে হালিশহরের আর্টিলারি রোডে কিশোর মো. সুমন হত্যা এবং একই দিনে নগরীর চট্টেশ্বরীতে যুবলীগ কর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে আবু জাফর অনিককে (২৬) খুন হয়। নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে আইমান জিহাদ নামের এক যুবককেও এই ধরনের ছুরি দিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। একই মাসে নগরীর বাকলিয়া তক্তারপোলে বন্ধু মোবারকের ছুরিকাঘাতে খুন হন জসিম উদ্দিন (২২)। এরমধ্যে পুলিশ হালিশহরে সুমন হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার এবং হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটি রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারও করেছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট