চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চন্দনাইশে রেললাইন প্রকল্পের ধাক্কা শঙ্খের ব্লকে!

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১৯ এপ্রিল, ২০২১ | ২:০৫ অপরাহ্ণ

সরকারের প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে শঙ্খ নদীর দু’ পাড়ে বসানো ব্লকের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে বালি সরবরাহের লক্ষ্যে নদী খননে।

রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যক্তির সাথে আঁতাত করে বিআইডব্লি­উটিএ’র অত্যাধুনিক মেগা ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে ড্রেজিংয়ের নামে সাতকানিয়ার কাটগড়-কালিয়াইশ অংশের বিপজ্জনক স্থান থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করছে। এতে ভাঙনের আশঙ্কা বেড়েছে নদীর দু’ পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী খরস্রোতা নদী শঙ্খ।

কসময় প্রতি বর্ষা মৌসুমে আতঙ্কে দিন কাটতো নদীর দু’ পাড়ের বাসিন্দাদের। বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর দু’ পাড়ে ব্লক স্থাপন করে দু’ পাড়ের বাসিন্দাদের মনে স্বস্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ড্রেজিংয়ের কারণে মানুষের মনে আশঙ্কা বাড়ছে। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এবং মানববন্ধন করেও কোন রকম প্রতিকার পায়নি বলে জানান। বিআইডব্লি­উটিএ’র একটি পত্রে শঙ্খ নদীর কিছু কিছু অংশে ড্রেজিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে ড্রেজিং না করে বিপজ্জনক স্থান থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে সাতকানিয়ার কাটগড়-কালিয়াইশের নবকল্লোল যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসানুজ্জামান বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শঙ্খ নদীর গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী বিশদ পরিকল্পনা না করে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ড্রেজিং করা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাঙনের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাপাউবো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন দোহাজারী ব্রিজ হতে বাঁশখালীর তৈলারদ্বীপ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে মোট ২১.৮৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং ছাড়া শঙ্খের অববাহিকার ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ব্যতীত বিচ্ছিন্ন ও অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করা সমীচীন হবে না। অথচ সাতকানিয়ার কাটগড়-কালিয়াইশ গ্রাম সেই ২১.৮৩ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।

তিনি আরো বলেছেন, কোনো ধরনের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ব্যতীত অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করে ভাঙনকবলিত কাটগড়-কালিয়াইশের বাসিন্দাদের ভিটেমাটি আবারো ভাঙনের মুখে ফেলে বাস্তুহারা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যেভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে শঙ্খ নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে এ এলাকায় সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার কৃষক পরিবারকেও পথে বসতে হবে। শঙ্খের তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনরকম অনুমোদন নেই বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেয়ার পর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে গত ৮ মার্চ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয় বলে তিনি জানান।

বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী প্রকৌশলী রেজাউর রশিদ খন্দকার এ ব্যাপারে বলেছেন, নৌ-পথ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাতকানিয়ার কাটগড়-কালিয়াইশ অংশে নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। নদী সংরক্ষণ, খনন মেইনটেইনেন্সের আওতায় কাজ হচ্ছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ অনেকের সাথে অনেক কথা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলা যাবে না। এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেছেন, বালি উত্তোলন বিষয়ে বিআইডব্লি­উটিএ’র সাথে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হয়েছে। যেহেতু এ ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি, সেহেতু ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়া অন্য আরেকটি প্রকল্পের সহযোগিতায় বালি উত্তোলন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, তা বিবেচনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে দোহাজারী ব্রিজের নিচ থেকে বালি উত্তোলন করায় চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছিল।

রেললাইন প্রকল্পে বালি দরকার, তাই তারা বিআইডব্লি­উটিএ’র সাথে আঁতাত করে অপ্রয়োজনে নদীতে ড্রেজিং করার প্রকল্প নিয়েছেন। এটা একমুখী নদী। এ নদীতে নৌ-পথ নেই। এখানে নৌপথের কোন সুযোগ নেই বলে এ নদীতে কোনরকম লঞ্চ বা স্টিমার চলাচল করে না। বিধায় এ নদীতে ড্রেজিংয়ের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরকে অবহিত করার পরও ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু মহলটি রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় অব্যাহত বালি উত্তোলনে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে বসানো ব্লক হুমকির মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সরকারের প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে শঙ্খ নদীর ভাঙনপ্রতিরোধে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে; তা বালি উত্তোলনের কারণে ভেস্তে যাবে। তাছাড়া বিগত কোন সময়ে বিআইডব্লি­উটিএ’র পক্ষ থেকে নদীর এ অংশে ড্রেজিং করা হয়নি এবং কোন প্রকল্প অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রীকে অবহিত করেছেন বলে জানান।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট