চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চোখে অন্ধকার দেখছে ওরা

মরিয়ম জাহান মুন্নি 

১৯ এপ্রিল, ২০২১ | ১:২০ অপরাহ্ণ

রাস্তায় এখন রিকশাচালকদের দাপট। সবার আয়-রোজকার বন্ধ হয়ে গেলেও প্রতিদিনই বেশ আয় হচ্ছে রিকশাচালকদের। যে কারোরই এমনটাই মনে হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রিকশাচালকরা জানান, আয় বাড়েনি, বরং ব্যয় বেড়েছে। করোনায় লকডাউনের কারণে ও রমজানে কেমন কাটছে রিকশাচালকদের জীবন বিষয়টি জানতে কথা হয় নগরীর বেশ কিছু রিকশাচালকের সাথে। রিকশাচালকরা লকডাউনের মধ্যে রিকশা চালালেও ভালোভাবে কারোরই চলছে না সংসার। কথা বলে এমনটাই জানা যায় তাদের সাথে।

চকবাজারে আকবর হোসেন, মেডিকেল এলাকায় কাশেম মিয়া, দুই নম্বর গেটে পারভেজ ও এমরান নামের রিকশাচালকরা প্রথমেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রিকশা চালাই ভাত খাই, চুরি করে নয়। করোনায় শহরে মানুষ নেই। কিন্তু রিকশাচালকতো কমে নাই, পারলে অন্য সময়ের চেয়ে আরো বেশি বেড়েছে। সাথে পুলিশের আয়ও বেড়েছে। পুলিশের লাঠির বাড়ি প্রাইভেটকারে পড়ে না, পড়ে রিকশাওয়ালাদের গায়ে। যা আয় হচ্ছে তার একটা অংশ দিতে হয় পুলিশকে। তারপর কোম্পানিকে। আমাদের জন্য থাকে সামান্য কিছু টাকা। যে টাকায় ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’।

লকডাউনে আমাদের ভালো হয়নি উল্টো ক্ষতি হয়েছে। শহরে মানুষ বেশি থাকলে আয়ও বেশি হয়। আর পুলিশের পেটও এতো বেশি পুরাতে হয় না। সবকিছু দিয়ে ভালোই কাটতো সংসার। সবজি, মাছ, মাংস ও চাল সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি আয়। রোজায় না মরে বেঁচে আছি আমরা। বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছি। পুলিশের জ্বালায় ঘর থেকে বেরুতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু একেবারে না বের হলে ঘরে সবাই উপোস হয়ে মরবে। তাই বের হচ্ছি। প্রয়োজন মিটাতে অনেক সময় যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়াও দাবি করছি। কিন্তু দাবি করলে কি হবে, সবাইতো আর তা দিতে চায় না। যেদিন বেশি আয় সেদিন পুলিশকেও বেশি দিতে হয়। কারণ বেশি চলাফেরা করলে পুলিশেও ধরে বেশি।

রিকশাচালক আকবর বলেন, রাস্তায় অনেক নতুন রিকশাচালককে দেখা যাচ্ছে। মানুষ না থাকলেও রিকশাচালক বেড়েছে। এরজন্য ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে অল্প টাকায় অনেক চালকরা ভাড়া টানছে। তাই আমরাও বাধ্য হয়ে যে ভাড়া ৫০ টাকা সে ভাড়া এখন ৩০ টাকায় যাচ্ছি। লকডাউনে রিকশা চালানোর কারণে পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছি। আগে যেখানে দিনে ১-২ বার পুলিশে ধরতো এখন সেখানে দিনে ৪-৫ বার পুলিশে ধরছে। সবাইকে টাকা দিয়ে আসতে হয়। এভাবে দিলে নিজের জন্য কি থাকে!

এমরান বলেন, আমি কালকে সারাদিনে ৭৮০ টাকা আয় করেছি। এরমধ্যে তিন জায়গায় পুলিশকে দিয়েছি ৩৫০ টাকা। কোম্পানিকে ২০০ টাকা। বাকি ২৩০ টাকায় কি বর্তমান বাজারে ৫ জনের সংসার চলে। এভাবেই চলছে আমাদের সংসার। কিন্তু আগে এর চেয়ে বেশি টাকা আয় হত আর খরচও কম হত। ভালোভাবেই চলে যেত সংসার।

কাশেম বলেন, কিস্তি আছে যেগুলো চালাতে হয়। আগে যে আয় হতো সেই টাকায় সংসার ও কিস্তি ভালোভাবেই চলে যেত। এখন শহরে মানুষ না থাকায় আয়ও কমেছে আর ভোগ্যপণ্যে দাম অনেক বেড়েছে। সেই হিসেবে মোটেই আয় বাড়েনি বরং কমেছে। তাই কোনরকমে খেয়ে দিন পার করছি।

আবার এবিষয় ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আছে যাত্রীদের মধ্যে। যাত্রীরা বলছেন, আগের চেয়ে বাড়া বেড়েছে। কর্মস্থল কিংবা প্রয়োজনীয় কাজে ঘর থেকে বের হলেই রিকশায় উঠতে হচ্ছে। আয় নেই কিন্তু ব্যয় অনেক বেশি। তবুও অনেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। কারণ রিকশা না থাকলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন না। আবার মাঝেমধ্যে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়ায় যাতায়াতের কথাও বলছেন অনেকে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট