চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রাউজানে ৮শ বছরের পুরনো নিদর্শন

জাহেদুল আলম, রাউজান

১৯ এপ্রিল, ২০২১ | ১:০০ অপরাহ্ণ

সাহেববিবি মসজিদ রাউজানের ৮০০ বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। যা এখনো স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাঁড়ি মিয়া চৌধুরীর বাড়িতে অবস্থিত এ মসজিদ শুধু রাউজান-ই নয়, পুরো চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক চমকপ্রদ ইতিহাস। ইতিহাস উদঘাটন করে জানা যায়, আরাকান রাজ সভার কবি মহাকবি আলাওলের একমাত্র কন্যা সাহেববিবির (প্রকাশ সাহাবিবি) নামকরণে এই মসজিদ সাহেববিবি মসজিদ নামে পরিচিত। সাহেববিবি হলেন রাউজান উপজেলার প্রসিদ্ধ জমিদার হাঁড়িমিয়া চৌধুরী বংশের আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর সহধর্মিণী।

আমির মোহাম্মদ চৌধুরী-সাহেববিবি দম্পতির দুই কন্যা আলাকা বানু ও মালকা বানু। মালকা বানু বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক কালজয়ী নাম এবং চরিত্র। মালকা বানু চট্টগ্রামের বাঁশখালীর জমিদার মনু মিয়ার প্রেমে পড়ে বিয়ে করেন এবং বাঁশখালীতে বসবাস করেন। মালকা বানু আর মনু মিয়াকে নিয়ে হয়েছিল চলচ্চিত্র। সেই ঐতিহাসিক মালকা বানুর মা সাহেববিবির নামে করা সাহেববিবি মসজিদটিও কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে রাউজানের বুকে। চুন সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর সাহেববিবি মসজিদটি।

এরপাশে ও সামনে প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেট। স্থাপনাটি ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, দুটি জানালা ও ১ গম্বুজ বিশিষ্ট। কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শৈল্পিক রূপ। স্থাপত্যের পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘি। ৮শ’ বছর পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর পত্নী ও চট্টগ্রামের আলোচিত মালকা বানুর মা সাহেববিবি এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদের পাশে রয়েছে ফুলবাগান সম্বলিত কবরস্থান যেখানে শায়িত আছেন এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুমা সাহেববিবি।

আকবর চৌধুরী বলেন ‘আমরা ছোট বেলায় দাদার মুখে শুনেছিলাম এই মসজিদটি বহু বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমার দাদাও তার দাদার মুখে শুনেছিলেন এটি বিদেশি মিস্ত্রী দ্বারা শত শত বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে। বাদশা মুহাম্মদ শাহ স্টেট’র আমলে ডিমের আঠা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

২২টি মসজিদের মধ্যে প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল সাহেববিবি মসজিদ।’ তিনি আরো বলেন ‘সাহেববিবি মসজিদটির ভেতরে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি মোতোয়াল্লির তত্ত্বাবধানে গত ৪ বছর আগে রূপগত পরিবর্তন করা হয়।’ এ প্রসঙ্গে রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, সাহেববিবি মসজিদ আমাদের রাউজানের ঐতিহ্য ও গর্ব। এটিকে আমরা যথাযথভাবে সংরক্ষণের চেষ্টা করবো।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট