চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছবি: সংগ্রহীত

‘রাস্তাত গাড়িও নাই, ঘরত চইলও নাই’

রাজীব রাহুল

১৮ এপ্রিল, ২০২১ | ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

‘অ-ভাই, পাঁচ কেজি চইল দঁ’অ না, হালিয়াত্তুন রিকশা চালাইয়ুঁম। আর বাকি ন গড়গুম’। এভাবেই নগরীর দেওয়ান বাজারের এক মুদির দোকানির সামনে পাঁচ কেজি চালের জন্য আকুতি মিনতি করছিল বাসচালক নূর হোসেন।
করেনার উর্ধ্বগতি সংক্রামণ ঠেকাতে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে দেশে। গত তিনদিন ধরে মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে শতকে। যার কারণে এই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। চলমান লকডাউনে লণ্ডভণ্ড চট্টগ্রামে লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিকদের সংসার।
মুদির দোকানের সামনেই কথা হয় বাসচালক নূর হোসেনের সাথে, নিজের শরীরে জামা তুলে দেখালো পিঠ, যেখানে কালো দাগ পড়ে গেছে বেতের আঘাতে। নূর জানায় লকডাউনে মানবেতর জীবন যাপন করছে তার পরিবার। মুদির দোকানে বাকি পড়েছে হাজার তিনেরও বেশি। আপাতত আর বাকি দিবে না বলে সাফ জানিয়েছে দোকানি।
পিঠে বেতের আঘাতের বিষয়ে সে জানায়, একটি ভ্যান ভাড়া নিয়ে তিন চার দিন সবজি বিক্রি করেছে রাস্তায়। তাতে পাঁচ সদস্যদের পরিবার নিয়ে চলার মত না হলেও ডালভাত জুটতো। রাস্তায় সবজি বিক্রির সময় টহল পুলিশের বেতের বাড়িতে সেদিন রাতে জ্বর আসে শরীরে । পরদিন থেকে পরিবারের কান্নাকাটির জন্য সবজি বিক্রিও ছেড়ে দে। এখন বেকার , ঘরে এক মুটো চালও নেই। গত বছরের লকডাউনে জেলা প্রশাসক, সিএমপি কমিশনার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে উপহারের প্যাকেট পেয়েছিল সে। এবার কেই পাশে নেই।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অতিরিক্ত মহাসচিব হাজী মো. ইউনুচ কোম্পানি জানান, করোনার চলতি বছরে চট্টগ্রামের পরিবহন শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত এক পয়সাও সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর ও আন্তঃজেলাসহ সর্বমোট অর্ধলক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক আছে। তারা এখন খুবই সংকটময় দিন পার করছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে রাস্তায় নামছি না। কিন্তু কিভাবে আমাদের পেট চলবে তার কোন সমাধান নেই। সবকিছুই তো বন্ধ। অন্য কোন কাজ যে করবে তার উপায়ও তো নেই। সরকার মানবিক দিক চিন্তা করে গতবারের মত এবারও আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব উজ্জল বিশ্বাস বলেন, গতবার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও আমরা সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছিরের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে লকডাউন আরও বাড়বে। পরিবহন শ্রমিকরা নিম্ম আয়ের লোক , তাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা থাকে না । তাদের জন্যও প্রণোদনা প্রয়োজন। না হলে তাদের চলবে কি করে।
চট্টগ্রাম অটো রিকশা-টেম্পো শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, করোনা ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকতে হবে ঠিক কথা। কিন্ত গণপরিবহন শ্রমিকরা চলবে কি করে? তারও বিকল্প থাকা দরকার। তাদেরও পরিবার পরিজন আছে তো। আমরা তো বলছি না নির্দেশনা মানবো না। আমাদের পাশে সরকার দাঁড়াবে আশা করছি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, করোনাকালে যেসব শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে বা কষ্টে আছে তাদের প্রত্যেকের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া গোষ্ঠী যারা মানুষের কাছে হাত পাতে, যাদেরকে অবহেলার চোখে দেখি তাদেরকেও ত্রাণের আওতায় আনতে চাই। নরসুন্দর, মুচি, জেলে, প্রতিবন্ধী, বেদে সম্প্রদায় ও পরিবহন শ্রমিকসহ যারা অতি কষ্টে দিনযাপন করছে তাদের প্রত্যেককে পর্যায়ক্রমে ত্রানের আওতায় আনা হবে। আমরা চাই এই পরিস্থিতিতে কেউ অনাহারে ও কষ্টে থাকবেনা। যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন সমাজের অসহায় ও অস্বচ্ছল মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা প্রকাশ্যে সাহায্য নিতে সংকোচবোধ করছে বা সাহায্য চেয়ে আমাদের কাছে টেলিফোন ও এসএমএস করছেন তাদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে ২০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে। নগরীতে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩’শ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

পূর্বকোণ / আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট