চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাইকোর্টের পৃথক বেঞ্চ স্থাপন জরুরি চট্টগ্রামে

সারোয়ার আহমদ

১৭ এপ্রিল, ২০২১ | ৩:০০ অপরাহ্ণ

আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের পৃথক বেঞ্চ স্থাপন, অর্থডক্স বা নিবিড় পরিদর্শন বাতিল করা এবং স্থানীয় উৎপাদকদের অগ্রিম কর থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। এছাড়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত সংগঠন চিটাগাং চেম্বার থেকে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় তিনি কাস্টমস বিষয়ক খাতে ৯৭টি এবং ভ্যাট খাতে আরও ৪৫টি প্রস্তাবনাসহ সর্বমোট ১৪২টি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। গত ২৫ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো প্রস্তাবনায় চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম আশা প্রকাশ করেন, এসব প্রস্তাব আসন্ন বাজেটে পাস হবে এবং ব্যবসা বান্ধব বাজেট পেশের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাবি পূরণ হবে।

বাজেট প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম আরো বলেন, দেশীয় শিল্প রক্ষায় বাজেট হতে হবে ব্যবসা বান্ধব। দেশীয় উৎপাদনকারীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার বিকল্প নেই। করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পাবলিকলি ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার কমানো প্রয়োজন। সারচার্জের ক্ষেত্রে নিট পরিসম্পদের পরিমাণ তিন কোটি টাকার পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য করা প্রয়োজন। খাতুনগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসা করে। তাদের শুল্ক আগে দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল যা চলতি বছর দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। এটি আগের পর্যায়ে নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া একজন ব্যবসায়ী যদি একটি ব্যাংকে খেলাপি হন অন্যান্য ব্যাংকেও তাকে খেলাপি হিসেবে ধরা হয়। এ কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ওই ব্যবসায়ীকে। ব্যাংক খাতের এমন নীতি পরিহার করা দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি।

তিনি আরো দাবি করেন, কর নিষ্পত্তি আপিলের ক্ষেত্রে গড়ে ৫ শতাংশ কর জমাদান, লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে ২ শতাংশ করারোপ প্রত্যাহার, মোট প্রাপ্তি ৩ কোটি টাকা হলে শুন্য দশমিক ৫ শতাংশ, ন্যূনতম আয়করের বিধান রহিতকরণ, খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত অর্থ আইন ২০২০ সংশোধন, ইস্পাত শিল্পে অগ্রিম কর সমন্বয়, গাড়ির ট্যাক্স টোকেন নবায়নে ২ বছরের পরিবর্তে পূর্বের ন্যায় ১ বছরের অগ্রিম কর আদায় করা, কোয়ার্টারলি ট্যাক্স পরিশোধে বিলম্ব হলে জরিমানা হতে অব্যাহতি প্রদান, কর অবকাশ খাত বর্ধিতকরণ, ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা এবং সেক্টর অনুযায়ী বিভিন্ন হারে নির্ধারণ, এলপিজি খাতে খুচরা বিক্রয়ের উপর আরোপিত ৫ শতাংশ মূসক বাদ দিয়ে পুনরায় ট্যারিফ মূল্য চালুকরণ এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সিলিন্ডার বিক্রিতে ৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার, জিপসাম বোর্ডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করা। এছাড়া কোটেড রডস, কোর্ড ওয়্যার, বেইজ মেটালের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে স্থানীয় শিল্পে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

এনবিআর-এ পাঠানো বাজেট প্রস্তাবনায় এলপি গ্যাস সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পরিবর্তনের যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে চেম্বারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এলপিজি ফিলিং স্টেশন এবং এলপিজি কনভার্সন সেক্টরগুলোকেও এস.আর.ও.’তে অন্তর্ভুক্ত করে আমদানি পর্যায়ে এর শুল্ক ও মূসক হতে অব্যাহতি দেওয়া না হলে বিষয়টি হবে সরকারের জ্বালানি নীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং বাধাগ্রস্ত হবে এই শিল্পের অগ্রযাত্রা।

আরো উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতার কথা বিবেচনা করে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় এলপি গ্যাস সহজলভ্য করতে এলপিজি সিলিন্ডার ও অটো ট্যাঙ্ক শিল্পখাতের ন্যায় ভাল্ব ও বাঙ্গ প্রস্তুতকারী শিল্পখাতকে একই সুবিধা প্রদান করা অতীব জরুরি। 

এছাড়াও কাস্টমস খাতে অন্যান্য প্রস্তাবনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল ফিলার মাস্টারবেচ’র কাস্টমস ডিউটি ১৫% এর পরিবর্তে ৫% নির্ধারণ করা, পূর্বের বছরগুলোর ন্যায় কটনের (তুলা) আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর বাতিল করা, স্থানীয় শিল্পখাতকে উৎসাহিত করতে ওয়ার রড পণ্যের জন্য নতুন এইচএসকোড সংযোজন, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিংখাতসহ প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকের অনুকুলে রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান, লুব্রিকেটিং অয়েলের স্থানীয় শিল্পের প্রণোদনার স্বার্থে পূর্বকার ট্যারিফ মূল্য সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ দর উভয় ক্ষেত্রে একই ট্যারিফ হারে রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করা, কার আমদানির বর্তমান স্লাব ভেঙে নতুন ২টি স্লাব ৮০০-১০০০ সিসি এবং (১০০১-১২০০ সিসি সৃষ্টি করে নতুন শুল্ক স্তর প্রবর্তন এবং ৮০০-১০০০ সিসি এবং ১০০১-১২০০ সিসি মোটরগাড়ির উপর বর্তমান সম্পূরক শুল্ক ৪৫% থেকে কমিয়ে ২০% করা, সিলিন্ডার প্রস্তুতে ব্যবহৃত ৯৯% কাঁচামালই বিভিন্ন হারে শুল্ক ও মূসক প্রদান করে আমদানি করতে হয় বলে সিলিন্ডার বিক্রয়ের উপর নতুন করে আরোপিত ৫% হারে মূসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আদায় করা ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ৬০ দিনের মধ্যে সমন্বয় করে ব্যবসায়ীদের ফেরত দেওয়ার বিধান করাসহ মোট ৯৭টি প্রস্তাব করা হয়।

অন্যদিকে, ভ্যাট বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা পাঠানো হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- উৎপাদনকারীর উপর আরোপিত ৪% অগ্রিম করের হার সর্বোচ্চ ১% করা, এলপি গ্যাস বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের উপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ না করা, বাল্ক এলপি গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে ৪% অগ্রিম কর হতে অব্যাহতি দেওয়া, আয়কর টার্নওভার ট্যাক্স ০ (শুন্য) শতাংশ করা, খুচরা গ্যাস বিক্রয়ের উপর আরোপিত ৫% মূসক বাতিল করে পুনরায় ট্যারিফ মূল্য চালু, হোটেল খাতের সকল সেবার উপর ১৫% ভ্যাট কমিয়ে ১০% এ নির্ধারণসহ মোট ৪৫টি সুপারিশ করা হয়।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট