চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চৌচির ৪ কৃষকের স্বপ্ন

হলুদ প্রজাতির তরমুজ চাষ সীতাকুণ্ডে

সৌমিত্র চক্রবর্তী

১৭ এপ্রিল, ২০২১ | ২:২৩ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বসরতনগর গ্রাম। এখানে সুদৃশ্য একটি ক্ষেতের গাছে থোকায় থোকায় হলুদ চায়না তরমুজ ঝুলছে। নেটের জালে সেগুলো সযত্নে ঘিরে রেখেছেন কৃষক। হলুদ রংয়ের এই তরমুজ এ তল্লাটে আর কখনো চাষ হয়নি। তাই আকারে আরেকটু বড় হলেই তরজুমগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করে ব্যাপক আর্থিক লাভবান হবেন-এমনটাই স্বপ্ন ছিলো চাষীদের। কিন্তু গ্রীস্মের দাবদাহের প্রচণ্ড খরায় ক্ষেতটি যেমন ফেটে চৌচির তেমনি চৌচির হয়ে গেছে এই তরমুজ চাষীদের স্বপ্নও। ফলে প্রথমবার ব্যতিক্রমী এই তরমুজ চাষ করেও হতাশ তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বসরতনগর গ্রামে কয়েকজন যুবক মিলে প্রথমবারের মত চায়না হলুদ তরমুজের চাষ করেছিলেন। ব্যতিক্রমী এই ফলনের ব্যাপক চাহিদা হবে-এমনটা ধরে নিয়ে কঠোর পরিশ্রমও করেন তারা। তাদের কষ্টে ইতিমধ্যেই প্রচুর ফলন আসে গাছে। কিন্তু গ্রীস্মের শুরু থেকে প্রবল খরায় মাঠগুলো ফেটে চৌচির। ফলে পানির অভাবে গাছেই শুকিয়ে যেতে থাকে ফলন, গাছ থেকে ঝরতে থাকে তরমুজগুলো। আর এতে স্বপ্ন ভাঙতে শুরু করে এর সাথে জড়িত অন্তত চার যুবকের।

সরেজমিনে এই ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, মাচাং পদ্ধতিতে বপন করা সবুজ রংয়ের গাছগুলো ৫-৬ ফুট লম্বা হয়ে প্রায় সবগাছেই এখন হলুদ তরমুজ ধরেছে। কিন্তু ফলনগুলোর আকার আর বাড়ছে না। ক্ষেতেই কথা হয় এক চাষী মো. জসীম উদ্দিনের সাথে। তিনি সীতাকুণ্ড পৌরসভার বাসিন্দা হলেও বন্ধুদের সাথে সৈয়দপুরের বসরতনগরে গিয়ে ৫৬ শতক জমিতে এই তরমুজ চাষ করেছেন।

জসীম ও তার অপর চাষী বন্ধু শাহাদাত হোসেন বলেন, এ তরমুজ চাষ হয় উত্তর বঙ্গে। সীতাকুণ্ড তো দূরের কথা চট্টগ্রামেও এই তরমুজ কেউ চাষ করেন বলে জানা নেই। তরমুজগুলো দারুণ সুন্দর দেখতে। আকর্ষণীয় রংয়ের সাথে স্বাদও বেশ। তাই আমরা মনে করলাম এই তরমুজ চাষ করলে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে। আমরা পানি সংকট দূর করতে অনেক দূর থেকে পানি এনে ২০-২৫ ঘণ্টা জমিতে সেচ দিই। গাছের লতা আসা শুরু করলে মাচা তৈরি করা হয়। কিন্তু গরম যত বাড়তে থাকে বৃষ্টি না থাকায় ততই গাছগুলো শুকাতে থাকে। এ অবস্থায় ফলগুলো বড় হয়ে আধা কেজি, এক কেজি সাইজের হওয়ার পরই ঝরে যেতে থাকে। জসীম ও মো. শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, এখন পানির অভাবে যেভাবে ফলন নষ্ট হচ্ছে তাতে আমাদের লাভ তো দূরের কথা দেড় লাখ টাকার মত লোকসান হবে বলে ধারণা করছি।

এই এলাকায় কৃষি কর্মকর্তাদের কোন সহযোগিতা তারা পান না জানিয়ে বলেন, এখানে প্রচুর কৃষি জমি আছে। সেচের পানির অভাবে কৃষকরা যুগ যুগ ধরে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষেতে কোন ডিপ টিউবয়েল বা কলের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাহলে তাদের মত অসংখ্য কৃষক উপকৃত হতো। কৃষকের এমন সর্বনাশ হতো না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, হলুদ তরমুজ চাষের কথা তিনি জানেন না। তবে এখানে একসময় অন্য প্রজাতির তরমুজ চাষ হতো। পানি সংকটের কারণে সেসব চাষও বন্ধ হয়ে গেছে। গভীরতা প্রচুর হওয়ায় এখানে কোন গভীর নলকূপও স্থাপন করা যায় না। তারা যদি কৃষি বিভাগের পরামর্শ দিয়ে এ চাষ করত তাহলে হয়ত আগেই জেনে যেতো যে এ চাষের জন্য অনেক পানি লাগবে।

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার রঘু নাথ নাহাও বলেন, এ তরমুজ চাষের কথা তার জানা নেই। কেউ তাকে জানায়নি। সাংবাদিকদের কাছেই তিনি শুনেছেন। সেখানে কি অবস্থা খোঁজ নিয়ে তিনি সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

র্পূবকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট