চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

হালদায় ‘ডিম ধরা’ উৎসবের প্রতীক্ষা

মোহাম্মদ আলী

১৩ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

অন্যান্য বছর মার্চ-এপ্রিলে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও এবার দেখা নেই। বৃষ্টি নামলে হালদায় মাছের আনাগোনা যেমন বাড়ে এবং মাছের পেটে ডিমের পরিপক্কতা হয়। অনুকূল পরিবেশ পেলে দ্রুত ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবার চলতি এপ্রিলে ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছেন সংগ্রহকারীরা।

সাধারণত এপ্রিল এবং মে মাসে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তাই ডিম সংগ্রহকারীরা খুব দ্রুততার সাথে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে।  মাটির কুয়া তৈরি, নৌকা সংগ্রহ, ডিম সংগ্রহকারী জোগাড় এবং ডিম ধরার অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করার ব্যস্ত সময় পার করছেন আহরণকারীরা। একই সাথে সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে সরকারি হ্যাচারিগুলো।

ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সওদাগর ও মোহাম্মদ হাসান শিকদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। ডিম সংগ্রহের জন্য এখন আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তৈরি করা হয়েছে মাটির কুয়া। নৌকা, জাল, বড় পাতিলসহ ডিম ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি এপ্রিল কিংবা আগামী মে মাসে হালদায় ডিম ছাড়তে পারে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছ। ডিম ধরার উৎসবে মেতে উঠতে নদীর দুই পাড় রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার সহস্রাধিক ডিম সংগ্রহকারী মাটি ও পাকা কূয়া, নৌকা, ডিম ধরার মশারি জাল, বালতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমায় মেঘের গর্জন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল নামলেই ডিম দিতে পারে মা মাছ। এ সময় ডিম ধরা উৎসবে মেতে উঠবেন তারা।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ডিম থেকে রেণু ফোটাতে রাউজান ও হাটহাজারীর ৪টি সরকারি হ্যাচারিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। একই সাথে ডিম সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে’।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমীন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ডিম দেওয়া মওসুমকে সামনে রেখে হালদায় আগের তুলনায় দ্বিগুণ অভিযান চালানো হচ্ছে। আমি প্রতিদিন একবার হলেও হালদায় যাচ্ছি। এরমধ্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার স্যার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে হাটহাজারীর তিনটি সরকারি হ্যাচারি সংস্কারের জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হ্যাচারি সংস্কারের কাজ শুরু করবো’।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও হালদা গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘এবার হালদার পরিবেশ খুব ভাল। তুলনামূল দূষণের পরিমাণ কম, নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এলাকার মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে এ বছর এখনো বৃষ্টি হয়নি। আশা করছি বৃষ্টি নামার পর অনুকূল পরিবেশ পেলে হালদায় ডিম ছাড়বে মা মাছ’।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদা। যেখান থেকে রুই জাতীয় মাছের সরাসরি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। রাউজান-হাটহাজারী উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে স্মরণাতীত কাল থেকে প্রতিবছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছ। হ্যাচারি পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ পোনার কদর সারাদেশে। ডিম সংগ্রহকারীরা স্থানীয়ভাবে মাটির কূয়া তৈরি করে অপেক্ষায় থাকে, মা মাছ কখন ডিম ছাড়বে সে আশায়। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করে তারা। রেণুর আয় দিয়ে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করে আহরণকারীরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট