চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

অস্তিত্ব সংকটে মরিয়মবিবি খাল

ইমরান বিন ছবুর

২৬ জুন, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পানি নিষ্কাশনের অন্যতম খাল পাথরঘাটার মরিময়বিবি খাল। এক সময় এই খাল দিয়ে সাম্পান এবং নৌকা চলাচল করতো। মালামাল আনা-নেওয়া করা হতো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। বর্তমানে নৌকা তো দূরে থাক, পানি যাওয়ার জায়গাটুকু নেই। কোথাও ময়লার ভাগাড়, কোথাও মাঠে পরিণত হয়েছে। দূষণ এবং দখলে মরিয়মবিবি খালটি এখন মৃত প্রায়। কাগজে কলমে সাড়ে ৮ মিটার থেকে সাড়ে ১৬ মিটার প্রস্থ এই খালটি। তবে বাস্তব চিত্র হচ্ছে অবৈধ দখলে অস্তিত্ব সংকটের মুখে। নগরীর পাথরঘাটার নজু মিয়া লেন থেকে শুরু হয়ে ব্রিকফিল্ড সড়ক, আশরাফ ব্রিক ফিল্ড সড়ক, আশরাফ আলী সড়ক হয়ে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ খাল। নগরীর আশরাফ আলী রোড পাথরঘাটা এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ খালটিকে কেউ কেউ বান্ডেল খাল হিসেবেও চিনে। জেল রোড থেকে শুরু হয়ে এ খালের একটি মুখ গিয়ে পড়েছে কর্ণফুলী নদীতে। এ খালের আরেকটি মুখ যুক্ত হয়েছে চাক্তাই খালের সঙ্গে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, নগরীর পাথরঘাটার আশরাফ আলী রোডের মতিনাবাদ আবাসিক এলাকার আশপাশে খালের সাথে যুক্ত প্রায় সবগুলো ড্রেন ময়লা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা এবং আসাদগঞ্জের পেছনের ড্রেনগুলো সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবাসিক এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা ময়লা-আবর্জনা নির্দিস্ট ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেন বা খালে ফেলে। প্রতিদিন কয়েকশ টন গৃহস্থালি বর্জ্য গিয়ে পড়ছে এ খালে। নিয়মিত পরিষ্কার ও সংস্কারের অভাবে খাল ভরাট হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ফলে অল্প বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হতে না পেরে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
ব্রিকফিল্ড রোডের স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, এলাকার অনেকে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব দেখিয়ে অবৈধভাবে খাল দখল করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিডিএ বা সিটি কর্পোরেশন কাউকেই অবৈধ খাল উদ্ধারে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়াও, খাল বা ড্রেন ভরাটের পেছনে মানুষের সচেতনার অভাব রয়েছে। এলাকার অনেককেই দেখি বাসা থেকে সরাসরি খালে ময়লা পেলে। শোনা যাচ্ছে সিডিএ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিলে খালের অবৈধ অংশ দখলমুক্ত করবে।
মতিনাবাদ আবাসিকে দেখা যায়, ড্রেন ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। আর ব্রিকফিল্ড এবং আশরাফ আলী রোডে মরিয়ম বিবি খাল ঘেঁষে উঠেছে একাধিক বহুতল ভবন। ভবনগুলোর ময়লা-আবর্জনা সব নিক্ষেপ করা হয় এই খালে। এর ফলে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি। আশরাফ আলী রোড, ব্রিকফিল্ড রোড ও নজু মিয়ার লেনের কোথাও উল্লেখ যোগ্য কাজ হয়নি। তাই বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় রয়েছে। একই চিত্র দেখা যায়, আশরাফ আলী রোডের ভাঙ্গাপুল বা মরিয়ম পুল। তবে অন্যদিকে নতুন ফিশারিঘাট এলাকায় দেখা যায়, কর্ণফুলীর নদীর সাথে যুক্ত হওয়া মরিয়ম খাল খননের কাজ চলছে। খাল খননের পাশাপাশি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে।
সিডিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এই খালে মোট ৪৭টি অবৈধ স্থপনা রয়েছে। এরমধ্যে খালের তীর বরাবর প্রস্তাবিত রাস্তায় অন্তর্ভুক্ত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে ২১টি এবং খালের ডিজাইনে অন্তর্ভুক্ত অবৈধ স্থাপনা ২৬টি। বিএস খাল অনুসারে এই খালে অবৈধ দখল হয়েছে ৬.৬৮০ একর জায়গা। শীঘ্রই অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালাবে সিডিএ।
সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক আহম্মদ মঈনুদ্দিন জানান, খালের উভয় পাশে অসংখ্য অবৈধ দখলদার রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে খালটি দখল করে রেখেছে। এখন অনেকাংশে খালটি মৃত প্রায়। এছাড়া খালের উভয় পাশের বাসা-বাড়ি থেকে সব ময়লা ওই খালে নিক্ষেপ করা হয়। মরিয়মবিবি খালসহ নগরীর সবগুলো খাল দখলমুক্ত করতে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সিডিএ উচ্ছেদ অভিযান চালাবে। উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য সেবা সংস্থার সাথে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেট এর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পে আমরা প্রাথমিকভাবে নগরীর ৩৬টি খাল খননের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাছাই করেছি। এই ৩৬টি খালের মধ্যে প্রায়োরিটির ভিত্তিতে প্রথমে ১৩ খালের খাল বাছাই করে কাজ করা হচ্ছে। এরমধ্যে মরিয়মবিবি খালও রয়েছে। নতুন ফিশারিঘাট এলাকার মরিয়মবিবি খালের অংশে এখন কাজ চলছে।
৩৪ নং পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালী জানান, এক সময় এ খাল দিয়ে সাম্পান চলাচল করতো। লোকজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আনা নেয়ার কাজে এ খাল ব্যবহার করতো। কিন্তু বর্তমানে এ খালটি মৃত প্রায়। আগে বিভিন্ন সময়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা খালের জমি ছাড়ছে না। আগামী মাস থেকে অবৈধ খাল উদ্ধারে সিডিএ মাঠে নামছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট